
পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে হিন্দু ব্যবসায়ীদের তিন দোকানে ডাকাতি! স্থানীয়দের আতঙ্ক—নিরাপত্তাহীন নাকালিয়া বাজার
নিজস্ব প্রতিবেদক :
পাবনার বেড়া উপজেলার যমুনা নদীর পাড়ঘেঁষা নাকালিয়া বাজারে আবারো ঘটলো স্পিডবোটযোগে সংঘবদ্ধ ডাকাতি। সোমবার গভীর রাতে প্রায় ১৫–২০ জনের একটি ডাকাত দল নদীপথে এসে বাজারের চারটি দোকানের তালা ভেঙে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে পালিয়ে গেছে। এর মধ্যে তিনটি দোকান হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীদের বলে জানা যায়। বারবার একই ধরনের ডাকাতির ঘটনায় এলাকাজুড়ে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা যায়, রাত প্রায় তিনটার দিকে একটি বড় স্পিডবোট ভেড়ায় নাকালিয়া ঘাটে। নেমেই ডাকাতেরা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাজার পাহারাদার ও সেখানে থাকা দুজন ব্যবসায়ীকে হাত-পা বেঁধে তাদের ফোন ছিনিয়ে নেয়। এরপর পুরো ঘাট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দল বেঁধে বাজারের বিভিন্ন দোকানে ছড়িয়ে পড়ে।
ডাকাতরা যেসব দোকানে হামলা চালায় তার মধ্যে রয়েছে—
স্বপন কুণ্ডুর ‘স্বপন জুয়েলার্স’, অলোক শীলের সোনার দোকান, কার্তিক কুণ্ডুর মুদি দোকান, এছাড়াও আবদুল্লাহর কাপড়ের দোকান। সোনার দোকান দুটির তালা ভেঙে তারা রুপা–সোনা ও নগদ অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নেয়।
সোনার দোকানের মালিক স্বপন কুণ্ডু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
“আমার দোকানে প্রায় ২০০ ভরি রুপা, ২ ভরি সোনা, আর ২৫ হাজার টাকা ছিল। সব নিয়ে গেছে। অন্তত সাত লাখ টাকার ক্ষতি হলো। আমি এখন একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেলাম।”
মুদি দোকান মালিক কার্তিক কুণ্ডু জানান,
“২০১৭ সালেও একইভাবে স্পিডবোটে এসে ডাকাতি করেছিলো। এবারও ঠিক সেই কায়দাতেই হলো। দোকানের তালা ভেঙে কমপক্ষে দুই লাখ টাকার মাল নিয়ে গেছে।”
নাকালিয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই বাজারে স্পিডবোটযোগে ডাকাতি নতুন নয়।
২০১৪ সালের ২ মার্চ ও ২০১৭ সালের ৫ মার্চ একই ধরনের হামলায় তখন ১৫ থেকে ২০টি দোকান লুট হয়েছিল। দুইবারের কোনোটিতেই পুলিশ কোনো ডাকাতকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ব্যবসায়ীদের দাবি—ঐতিহাসিক এই শিথিলতা ও তদন্তে অগ্রগতিহীনতার ফলেই আবারো একই পদ্ধতিতে ডাকাতি ঘটলো।
বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বলেন,
“নদীর ধারে বাজার হওয়ায় ডাকাত দল খুব সহজে স্পিডবোটে আসে এবং মুহূর্তেই নদীপথে পালিয়ে যায়। আগের দুইবারের ডাকাতির পর আমরা পুলিশ ফাঁড়ি চেয়ে বহুবার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু আজও কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
বেড়া মডেল থানার ওসি এ কে এম হাবিবুল ইসলাম বলেন,
“পুরনো ঘটনার তথ্য এখনো হাতে নেই, তবে এবারের ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। দায়ীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি বাজার এলাকায় নিয়মিত পুলিশি টহল জোরদারের বিষয়েও আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি।”
ক্রমাগত একই কায়দায় ডাকাতির ঘটনায় নাকালিয়া বাজারের হিন্দু ও অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা দিন দিন আরও জোরালো হচ্ছে। দ্রুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।