
যৌ’তুকের দাবিতে নির্যাতিত কৃষ্ণা রাণীর নির্মম মৃত্যু—সমাজে শোক ও ক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রংপুরের পীরগাছায় যৌ’তুকের দাবিতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারালেন কারমাইকেল কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মেধাবী ছাত্রী কৃষ্ণা রাণী (২১)। নিজের পড়াশোনা, স্বপ্ন আর পরিবারের আশা—সবই পদদলিত হলো কয়েকজন লোভী মানুষের বর্বরতায়।
কৃষ্ণা রাণী রংপুর কারমাইকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। পড়াশোনায় মনোযোগী, শান্ত স্বভাবের, নিজের প্রচেষ্টায় পরিবারকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। এক বছর আগে তিনি প্রেমের সম্পর্ক থেকে বিয়ে করেছিলেন পীরগাছার পওশী গ্রামের দীলিপ চন্দ্রকে। স্বপ্ন করেছিলেন—ভালোবাসা হবে জীবনের নিরাপত্তা। কিন্তু সেই ভালোবাসাই হয়ে উঠলো মৃত্যুফাঁদ।
বিয়ের পর থেকেই স্বামী ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে ৪ লক্ষ টাকার যৌ’তুক দাবিতে নিয়মিত গালিগালাজ, অপমান ও মারধর করা হতো। একাধিকবার গ্রাম্য শালিশ বসলেও অভিযোগ থেকে তারা সরে আসেনি। বরং অত্যাচারের মাত্রা প্রতিদিনই বেড়েছে।
শুক্রবার কৃষ্ণা কাকার বাড়ির ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য রাস্তায় অটোরিকশার অপেক্ষায় ছিলেন। ঠিক সেই সময় স্বামী দীলিপ চন্দ্র, ভাসুর, দুলাল চন্দ্র এবং শ্বশুরসহ কয়েকজন হঠাৎ তাকে ঘিরে ফেলে। রাস্তায় পিটুনি শুরু করে, চুল ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় শ্বশুরবাড়ির ভেতরে, সেখানে আরও বেদম মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে কৃষ্ণা অচেতন হয়ে পড়েন।
পরবর্তীতে অভিযোগ রয়েছে—হত্যাকারীরা তাকে গলায় দড়ি দিয়ে সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যায়, যেন এটি আত্মহত্যা মনে হয়। পরিবার এবং প্রতিবেশীরা ছুটে এসে দেখেন, তাদের হাসিখুশি, মেধাবী মেয়েটি নিথর দেহে ঝুলছে।
পীরগাছা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় ময়নাতদন্তের জন্য। কৃষ্ণার বড় ভাই শুশান্ত চন্দ্র বাদী হয়ে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাসুরসহ পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
ইটাকুমারী শিবচন্দ্র রায় কলেজ—যেখানে কৃষ্ণা এইচএসসি পাশ করেছিলেন—সেখানে শিক্ষক, সহপাঠী ও গ্রামবাসী শোকে স্তব্ধ। সবাই এক সুরে দাবি করছেন, “কৃষ্ণার হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন। যেন আর কোনো মেয়েকে যৌ’তুকের জন্য প্রাণ দিতে না হয়।”