+5

কেমন ছিলো বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের সংখ্যালঘুরা

2 days ago
VIEWS: 360

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০০১ সাল। ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। কিন্তু নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরপরই দেশের একটি বড় অংশের মানুষের জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গেই সারা দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর শুরু হয় মধ্যযুগীয় কায়দাষ নির্যাতন, লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞ। নির্বাচনের দুই দশকেরও বেশি সময় পার হলেও সেই ক্ষত আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।

পূর্ণিমার সেই দুঃসহ স্মৃতি: একটি জাতির লজ্জা
২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার সবচেয়ে নৃশংস ও প্রতীকী চিত্র হয়ে আছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার পূর্ণিমা রানী শীলের ঘটনা। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ২০০১ সালের ৮ অক্টোবর রাতে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা হামলা চালায় তাদের বাড়িতে।

সেদিনের ভয়াবহতার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানা যায়, দুর্বৃত্তরা পূর্ণিমার মায়ের সামনেই তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। অসহায় মা সন্ত্রাসীদের পায়ে ধরে আকুতি জানিয়ে বলেছিলেন, “বাবারা, আমার মেয়েটা ছোট। তোমরা একজন একজন করে এসো, না হলে আমার মেয়েটা মরে যাবে।” কিন্তু সেই আকুতিতে মন গলে না পাষণ্ডদের। পরবর্তীতে ২০১১ সালে আদালত এই ঘটনায় ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও, সেই রাতের মানসিক ট্রমা আজও তাড়িয়ে বেড়ায় পূর্ণিমাকে।

ছবি রানীর ওপর পৈশাচিকতা
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ছবি রানীর ঘটনাটি ছিল আরও ভয়াবহ। আওয়ামী লীগের কর্মী হওয়ার অপরাধে ২০০২ সালের ২১ আগস্ট তাকে জনসমক্ষে বিবস্ত্র করে স্থানীয় বিএনপি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর তার গোপনাঙ্গে বালু ও কাচের গুঁড়ো ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই পৈশাচিক ঘটনা যখন ঘটছিল, তখন পাশেই পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও তারা ছিল নির্বিকার।

অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড
শুধু নারী নির্যাতনই নয়, ভিন্নমতের মানুষদের দমনেও ছিল চরম নৃশংসতা। ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে তার নিজ বাসায় মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা। মৃত্যু নিশ্চিত করতে বের করে ফেলা হয় মাথার মগজ।

এছাড়া সেই শাসনামলে (২০০১-২০০৬) সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার, মমতাজ উদ্দিনসহ অনেক হাই-প্রোফাইল রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

সংখ্যালঘু নির্যাতনের পরিসংখ্যান ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে হিন্দুদের ওপর প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি হামলার ঘটনা ঘটে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, কানাডার ইমিগ্রেশন বোর্ড এবং বিবিসি ও গালফ নিউজের মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও তখন এই সহিংসতার চিত্র উঠে আসে।ভুক্তভোগীরা বিএনপি-জামায়াতের এ কাজগুলোকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছেন। তাদের আমলে জঙ্গি ও মৌলবাদী শক্তিগুলোকে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা আশ্রয় দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গি ও মৌলবাদী শক্তিকে এ দেশে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। আর তাদের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সংখ্যালঘুরা।বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে সংখ্যালঘুরা ২৫ হাজারেরও বেশি বার হামলার শিকার হয়েছিল। ভুক্তভোগীরা বিএনপি-জামায়াতের এ কাজগুলোকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছেন। তাদের আমলে জঙ্গি ও মৌলবাদী শক্তিগুলোকে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা আশ্রয় দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গি ও মৌলবাদী শক্তিকে এ দেশে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। আর তাদের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সংখ্যালঘুরা।

ভোলা, বরিশাল, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হিন্দুদের বাড়িঘর দখল, অগ্নিসংযোগ এবং নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ভোলার চরফ্যাশন ও লালমোহনে নির্বাচনের পর প্রায় দুই মাস ধরে চলে একতরফা তান্ডব। অনেক হিন্দু পরিবার ভিটেমাটি ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়।

বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও বর্তমান অবস্থা
তৎকালীন সময়ে প্রশাসনের নীরবতা এবং রাজনৈতিক প্রশ্রয়ের কারণে অধিকাংশ ভুক্তভোগী মামলা করার সাহস পাননি। যারা সাহস করেছিলেন, তারাও শিকার হয়েছেন হুমকি-ধামকির। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্ত কমিশন’ গঠন করা হয়। তবে ভুক্তভোগীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সেই সময়ের অনেক অপরাধী আজও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। কেউ কেউ দল পাল্টে মিশে গেছে বর্তমান রাজনীতির স্রোতে।২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ওপর বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট ক্যাডারদের হামলা, মামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, খুন ও লুটের ঘটনা ছিল বহুল আলোচিত ঘটনা। সূত্রমতে, ওই সময় বিএনপি ও জামায়াত ক্যাডারদের তান্ডব ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পাক সেনাদেরও হার মানিয়েছিল। সেই সন্ত্রাসীরা এখনও সংখ্যালঘু নির্যাতনে তৎপর রয়েছে।

২০০১-পরবর্তী সেই দিনগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে, যা আজও স্মরণ করিয়ে দেয় সাম্প্রদায়িকতা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ভয়াবহ পরিণতির কথা।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন