
আড়াই মাস ধরে নিখোঁজ আদিবাসী শিক্ষার্থী রেংনয়া ম্রো!
HindusNews ডেস্ক :
বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উঠে আসা নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রেংনয়া ম্রো আড়াই মাস ধরে নিখোঁজ। জেলা প্রশাসন পরিচালিত কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের (বিসিএসসি) ছাত্রাবাসে থাকার কথা থাকলেও গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায় এই কিশোর। পরিবারের দুশ্চিন্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গাফিলতি এবং প্রশাসনিক অসহায়তার মাঝে রেংনয়ার খোঁজ মিলছে না এখনও।
রেংনয়া নিয়মিত ছাত্রাবাসে থাকলেও দুর্গাপূজার ছুটিতে লামার সরই ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২৫ সেপ্টেম্বর ছুটি শুরু হলেও সে বাড়িতে ফেরেনি। এরপর থেকে তার বাবা সিংপাস ম্রো কোনো খোঁজই পাননি ছেলের। ছাত্রাবাস কর্তৃপক্ষও দীর্ঘদিন রেংনয়ার অনুপস্থিতি টের পেয়েছে বলে স্বীকার করতে পারেনি।
বাবা সিংপাস ম্রো লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন—ছেলে নিখোঁজের ঘটনায় ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব এড়াতে পারে না। তিনি বলেন, “ছুটির আগে থেকেই আমার ছেলে ছাত্রাবাসে ছিল না। অথচ কেউ খোঁজ নিল না। তাদের অজানাই রয়ে গেল একটি শিক্ষার্থী দুই সপ্তাহ অনুপস্থিত—এটা কীভাবে সম্ভব?”
২৭ সেপ্টেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পর তদন্তে বেরিয়ে আসে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য—রেংনয়াকে সিসিটিভি ফুটেজে সর্বশেষ দেখা গেছে ১১ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ, ছুটির শুরু হওয়ার অন্তত ১৪ দিন আগে থেকেই সে ছাত্রাবাসে অনুপস্থিত ছিল। কিন্তু ছাত্রাবাস কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, হাজিরা খাতা না থাকায় সঠিক সময় জানা সম্ভব নয়।
ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক আসাদ উদ্দিন চৌধুরী জানান, নিখোঁজের সময় তিনি ছুটিতে ছিলেন। দায়িত্বে থাকা সুনীল ত্রিপুরা স্বীকার করেছেন যে, তারা রেংনয়ার অনুপস্থিতি শনাক্ত করতে পারেননি।
বিসিএসসির দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবু তালেব বিষয়টির গুরুত্ব স্বীকার করে বলেন, “ছাত্রাবাসের দায়িত্বশীলদের গাফিলতি রয়েছে। ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই প্রশাসন ও পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে তাকে খুঁজে বের করার। পাওয়া গেলে বোঝা যাবে কী কারণে সে ছাত্রাবাস ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।”
রেংনয়ার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় পরিবারে চলছে গভীর শোক ও অনিশ্চয়তা। পাহাড়ি এলাকায় এক শিক্ষার্থীর এমন হারিয়ে যাওয়া স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যেও আতঙ্ক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। নিখোঁজ রেংনয়াকে দ্রুত উদ্ধার ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন তার পরিবার ও স্থানীয়রা।