
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোরআন অবমাননায় মুসলিম যুবক গ্রেপ্তার: জনমনে প্রশ্ন—‘অপরাধী ভিন্ন ধর্মের হলে পরিস্থিতি কী হতো?’
ষ্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় পবিত্র কোরআন শরীফে অগ্নিসংযোগ ও অবমাননার অভিযোগে এক মুসলিম যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার লাউরফতেহপুর ইউনিয়নের বাড়িখলা মাদ্রাসায় এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। তবে অপরাধীর ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর জনমনে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠছে নানা প্রশ্ন। অনেকেই বলছেন, অপরাধী যদি মুসলিম না হয়ে কোনো হিন্দু বা অন্য ধর্মের হতেন, তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হয়তো বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ত।
ঘটনার বিবরণ
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে বাড়িখলা বহুমুখী হাফিজিয়া মাদ্রাসায় প্রবেশ করেন ওই যুবক। সেখানে তিনি পবিত্র কোরআন শরীফে অগ্নিসংযোগ করেন এবং পা দিয়ে আপত্তিকর আচরণ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে মুহূর্তের মধ্যে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত জনতা অভিযুক্ত যুবককে আটক করে বেধড়ক পিটুনি দেয়। খবর পেয়ে নবীনগর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং রক্তাক্ত অবস্থায় ওই যুবককে উদ্ধার করে।
গ্রেপ্তারকৃত যুবকের নাম বায়েজিদ। তিনি ওই গ্রামেরই মৃত এনামুল হক খোকন মেম্বারের ছেলে।
দ্বিমুখী আচরণের অভিযোগ ও জনমনে ক্ষোভ
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় জনগণ ও নেটিজেনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই মন্তব্য করছেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনায় অপরাধীর ধর্মীয় পরিচয়ভেদে প্রতিক্রিয়ার ধরন পাল্টে যায়।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “সে (বায়েজিদ) সুস্থ মস্তিষ্কেই আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। সে নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী। আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই।”
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বিশ্লেষক বলেন, “আজ অপরাধী একজন মুসলমান ঘরের সন্তান হওয়ায় তাকে শুধু পুলিশে দেওয়া হয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এই একই কাজ যদি কোনো হিন্দু বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউ করত, তবে হয়তো এতক্ষণে এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হতো। অতীতে আমরা দেখেছি, গুজবের ওপর ভিত্তি করেও সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা হয়েছে। অথচ আজ প্রশাসন নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে পারছে কারণ অপরাধী সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের।”
প্রশাসনের বক্তব্য
নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহীনুর ইসলাম ‘ফেস দ্যা পিপল’কে জানান, পুলিশ বাদী হয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করেছে। তিনি বলেন, “অভিযুক্ত যুবক সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ বলে জানা গেছে। উত্তেজিত জনতা তাকে পিটিয়ে আহত করায় বর্তমানে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় চিকিৎসাধীন আছেন। তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে।”
সর্বশেষ অবস্থা
বর্তমানে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করলেও পুলিশের তৎপরতায় বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে সচেতন মহল মনে করছেন, অপরাধী যেই হোক—তার পরিচয় ধর্ম নয়, সে একজন অপরাধী। ধর্মীয় অবমাননার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে বা সাম্প্রদায়িক উস্কানি না দিয়ে সবসময়ই প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখা উচিত, যেমনটি এই ঘটনায় দেখা গেছে।