
খুলনায় ঐতিহাসিক ‘শিববাড়ী’ মোড়কে ‘বাবরী চত্বর’ নামে প্রচার: হিন্দু সম্প্রদায়ের তীব্র ক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা:
খুলনা মহানগরীর ঐতিহাসিক ‘শিববাড়ী মোড়’কে একটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশে ‘বাবরী চত্বর’ হিসেবে উল্লেখ করে পোস্টারিং ও প্রচারণা চালানোর ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারিভাবে নাম পরিবর্তনের কোনো সিদ্ধান্ত না থাকলেও জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির সংশ্লিষ্ট একটি প্রচারণায় স্থানটিকে ‘বাবরী চত্বর (শিববাড়ী)’ হিসেবে উল্লেখ করায় নতুন করে এ বিতর্কের সূত্রপাত হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে ঐতিহাসিক এই স্থানের নাম বিকৃত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তারা মনে করছেন, এটি কেবল নাম পরিবর্তন নয়, বরং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের একটি পরিকল্পিত প্রয়াস।
পুরনো বিতর্কের নতুন রূপ:
জানা যায়, এর আগেও খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) শিববাড়ী মোড়ের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছিল। ২০১৯ সালে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা দেওয়া হলেও খুলনার সচেতন নাগরিক সমাজ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রবল আপত্তির মুখে কেসিসি সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। বর্তমানে সরকারি নথিপত্রে স্থানটির নাম ‘শিববাড়ী’ হিসেবেই বহাল রয়েছে এবং নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়াও স্থগিত। সরকারি সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে রাজনৈতিক পোস্টারে নতুন নাম ব্যবহারকে ‘বেআইনি’ ও ‘উসকানিমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন স্থানীয়রা।
হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্বেগ ও অভিযোগ:
নাম পরিবর্তনের এই অপচেষ্টায় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের প্রধান অভিযোগগুলো হলো:
১. ঐতিহাসিক ‘শিববাড়ী’ নামটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করা হচ্ছে, যা এলাকার ঐতিহ্যকে অস্বীকার করার শামিল।
২. ‘বাবরী’ শব্দটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সংবেদনশীল। রাজনৈতিক ব্যানারে এই শব্দের ব্যবহার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
৩. সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে এমন নামকরণ ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ এবং ভীতিকর পরিবেশ তৈরির ইঙ্গিত।
দাবি ও আহ্বান:
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানানো হয়েছে। তারা অবিলম্বে শিববাড়ী মোড় নিয়ে সব ধরনের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে ধর্মীয়ভাবে সংবেদনশীল শব্দ ব্যবহার থেকে বিরত থাকার এবং খুলনার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।
স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, সরকারি সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকা অবস্থায় একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এমন প্রচারণা স্পষ্টতই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।