
চট্টগ্রামের হিন্দু ব্যবসায়ীর জাহাজ ভাড়ায় নিয়ে কেটে বিক্রি: ছাত্রদল নেতাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি :
চট্টগ্রামের হিন্দু ব্যবসায়ী রাকেশ শর্মার মালিকানাধীন একটি মালবাহী ডাম্ব বার্জ (ডিবি) জাহাজ ভাড়ায় এনে কেটে স্টিল হিসেবে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি শাহাদাত হোসেন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর জাহাজ মালিক সোনারগাঁ থানায় সাতজনের নামে মামলা করেন। মামলার এজাহারে তিনি এক কোটি ৬০ লাখ টাকার ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছেন।
ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার চার নম্বর আসামি নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাশেদুল হাসান খান।
গ্রেফতারকৃত নজরুল ইসলাম নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরবগুলা গ্রামের ইমানুল হকের ছেলে। অন্যদিকে মামলা হওয়া বাকি ছয় আসামি হলেন—নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি শাহাদাত হোসেন, তার সহযোগী মো. জাফর, ইকবাল, এমদাদুল হক, জাফর মিয়া ও হোসেন। এছাড়া আরও পাঁচ থেকে সাতজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, গত ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে জাহাজটি ভাড়া নেন শাহাদাত হোসেন ও তার সহযোগীরা। এক মাসের জন্য সাত লাখ ২০ হাজার টাকায় চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু চুক্তির পর তারা জাহাজটি নারায়ণগঞ্জের কাদিরগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত এইচবি হারুন অ্যান্ড ব্রাদার্স মেঘনা শিপইয়ার্ডে নিয়ে যান।
রাকেশ শর্মার অভিযোগ—শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি সিন্ডিকেট পরিকল্পিতভাবে জাহাজটি টুকরো টুকরো করে কেটে স্টিল প্লেট হিসেবে বিক্রি করে দেয়। গত রবিবার এক পরিচিতজন ফোন করে জাহাজ কাটার খবর দেন তাকে। তিনি রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে জাহাজ পুরোপুরি কাটা হচ্ছে—এটি দেখে থানায় মামলা করেন।
জাহাজের মালিক রাকেশ শর্মা বলেন,
“চট্টগ্রাম থেকে জাফর নামে একজন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মালামাল পরিবহনের জন্য জাহাজ ভাড়া নেন। পরে জানতে পারি, জাফর ও ছাত্রদল নেতা শাহাদাত মিলে জাহাজটি নিজেদের শিপইয়ার্ডে নিয়ে কেটে বিক্রি করে দিয়েছে। শাহাদাতের বাবা প্রথমে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরে টালবাহানা শুরু করেন। তাই বাধ্য হয়ে মামলা করেছি।”
অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা শাহাদাত হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
শাহাদাতের বাবা, শিপইয়ার্ডের মালিক ও স্থানীয় বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম বলেন,
“ঘটনা জানতে পেরে জাহাজ কাটার কাজ বন্ধ রেখেছি। মালিকপক্ষের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চলছে।”
সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাশেদুল হাসান খান বলেন,
“জাহাজ কেটে বিক্রির ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। বিষয়টি আপস-মীমাংসার নয়; আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জাহাজ কাটার এই ঘটনা স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মালবাহী জাহাজ ভাড়ায় এনে এভাবে ধ্বংস করে বিক্রি করে দেওয়া সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বড় প্রতারণা বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।