
মাত্র ১৯ বছরেই অসাধ্য সাধন! কাশীতে শুক্ল যজুর্বেদের ‘দণ্ডক ক্রম’ পাঠ করে ইতিহাস গড়লেন বেদমূর্তি দেবব্রত
বারাণসী, নিজস্ব সংবাদদাতা:
স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে যখন ‘জেন-জি’ (Gen-Z) প্রজন্মকে নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলে, ঠিক তখনই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন মাত্র ১৯ বছর বয়সী বেদমূর্তি দেবব্রত মহেশ রেখে। আধুনিকতার স্রোতে গা না ভাসিয়ে, তিনি ডুব দিয়েছেন সনাতন বিদ্যার গভীরতম সাগরে এবং তুলে এনেছেন এক বিরল মনি। কাশীর বুকে তৈরি হলো এক নতুন ইতিহাস।
বারাণসীর বল্লভরাম শালিগ্রাম সংবেদ বিদ্যালয়ে টানা ৫০ দিন ধরে চলা এক কঠোর তপস্যার সমাপ্তি ঘটেছে এক অভাবনীয় সাফল্যের মাধ্যমে। দেবব্রত মহেশ রেখে কোনো বইয়ের সাহায্য ছাড়াই, সম্পূর্ণ স্মৃতিশক্তিকে কাজে লাগিয়ে শুক্ল যজুর্বেদের প্রায় ২৫ লক্ষ পদ নির্ভুলভাবে জপ করেছেন। তাঁর এই জপ সাধারণ কোনো পাঠ ছিল না; তিনি এটি সম্পন্ন করেছেন বৈদিক সাহিত্যের সবচেয়ে জটিল ও দুরূহ সূত্র ‘দণ্ডক ক্রম’ অনুসারে।
কেন এই ঘটনা ঐতিহাসিক?
শৃঙ্গেরি মঠের ভাষ্য অনুযায়ী, বৈদিক পাঠের জগতে ‘দণ্ডক ক্রম’ বা দণ্ডক্রম-কে বলা হয় ‘মুকুট’। এর জটিল স্বরচিহ্ন, সূক্ষ্ম ধ্বনিবিন্যাস এবং অত্যন্ত কঠিন উচ্চারণ-পদ্ধতির কারণে এটি সম্পন্ন করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করা হয়। ইতিহাস বলছে, দেবব্রতের আগে মাত্র তিনবার এই দণ্ডক ক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ১৯ বছর বয়সী দেবব্রত চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে এই তালিকায় নাম লেখালেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, দেবব্রতের এই পাঠ ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে নির্ভুল এবং এটি সম্পন্ন করতে তিনি সবচেয়ে কম সময় নিয়েছেন।
৫০ দিনের নিরবচ্ছিন্ন সাধনা
টানা ৫০ দিন ধরে চলে এই ‘পারাণ’ বা আবৃত্তি। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি একবারের জন্যও বইয়ের পাতা উল্টে দেখেননি। সম্পূর্ণ পাঠটি ছিল তাঁর মস্তিষ্কে গাঁথা। ২৫ লক্ষ পদের এই বিশাল ভান্ডার তিনি দণ্ডক ক্রমের জটিল গাণিতিক বিন্যাস মেনে আবৃত্তি করে গেছেন।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও উপস্থিত পণ্ডিতরা এই তরুণ বেদমূর্তির মেধা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা দেখে বিস্মিত। তাঁদের মতে, ১৯ বছর বয়সে এমন ধৈর্য, শৃঙ্খলা এবং কঠোর অনুশীলন বর্তমান সময়ে সত্যিই বিরল। দেবব্রত প্রমাণ করে দিলেন, কঠোর অধ্যবসায় থাকলে কোনো লক্ষ্যই অর্জন করা অসম্ভব নয়। প্রাচীন বৈদিক ঐতিহ্য রক্ষায় এই তরুণের অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।