
খুলনা-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তন: নতুন প্রার্থী সনাতন ধর্মের কৃষ্ণ নন্দী!
HindusNews ডেস্ক :
খুলনা-১ (দাকোপ–বটিয়াঘাটা) আসনে শেষ মুহূর্তে বড় ধরনের চমক দিল জামায়াতে ইসলামী। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সনাতন ধর্মাবলম্বী ব্যবসায়ী ও স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় মুখ কৃষ্ণ নন্দীকে দলটির আনুষ্ঠানিক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দলের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোনো অমুসলিম নাগরিককে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী করার ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোচনা তৈরি করেছে।
বুধবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে খুলনা মহানগর জামায়াত কার্যালয়ে আয়োজিত জেলা কর্মী সমাবেশে এই ঘোষণা দেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি জেনারেল ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। পূর্বে ঘোষিত প্রার্থী মো. ইউসুফের পরিবর্তে কৃষ্ণ নন্দীর নাম চূড়ান্ত হওয়ায় এলাকাজুড়ে নতুন করে রাজনৈতিক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
কৃষ্ণ নন্দীর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা :
প্রার্থী ঘোষণার পর গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে কৃষ্ণ নন্দী জানান, গত ১ ডিসেম্বর জামায়াতের আমির ড. শফিকুর রহমান খুলনায় এলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করেন। পরে তাকে নিয়ে আমির ও আগের সম্ভাব্য প্রার্থী মাওলানা ইউসুফ একসঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকের বিষয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন,
“আমির সাহেব নিজ হাতে আমাকে প্রার্থী হিসেবে কাজ করতে বলেন। একই বৈঠকে মাওলানা ইউসুফও ঘোষণা দেন যে তিনি আমার সঙ্গে দলের হয়ে কাজ করবেন।”
জামায়াতের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য:
খুলনা জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুন্সী মঈনুল ইসলাম জানান—
“দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খুলনা-১ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। বাবু কৃষ্ণ নন্দী এখন দাঁড়িপাল্লার আনুষ্ঠানিক প্রার্থী। দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন।”
কেন আলোচনায় কৃষ্ণ নন্দী :
ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ নন্দী পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু সংগঠন “জামায়াত ইসলাম সনাতনী শাখা”র সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
গত এক বছরে ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের প্রায় সব রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তার দৃশ্যমান উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। শুধু নিজে নয়—তার নেতৃত্বে উল্লেখযোগ্য হিন্দু নারী–পুরুষ বিভিন্ন সমাবেশে অংশ নিয়েছেন, যা স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করে।
দলীয় সূত্র বলছে, কৃষ্ণ নন্দীর তৃণমূল সক্রিয়তা, স্থানীয় জনপ্রিয়তা এবং হিন্দু ভোটব্যাংকে প্রভাবের কারণে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত তাকে মনোনয়ন দেয়।
আগের প্রার্থী কেন পরিবর্তন?
খুলনা-১ আসনে আগে মো. ইউসুফকে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছিল জামায়াত। তবে দীর্ঘ বিশ্লেষণ, মাঠ–পর্যায়ের মূল্যায়ন এবং কেন্দ্রীয় নির্দেশনার ভিত্তিতে শেষপর্যন্ত প্রার্থী পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। দলের অভ্যন্তরীণ আলোচনা অনুযায়ী, তৃণমূলে কৃষ্ণ নন্দীর গ্রহণযোগ্যতা বেশি হওয়ায় দলের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
খুলনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন চমক :
একটি ইসলামি রাজনৈতিক দলের টিকিটে প্রথমবারের মতো সনাতন ধর্মাবলম্বীকে প্রার্থী করা দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি জামায়াতের কৌশলগত পরিবর্তন এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা।
খুলনা-১ আসনে এখন নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। কৃষ্ণ নন্দীর মনোনয়ন ঘোষণা নির্বাচনী মাঠে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে, যা পরবর্তী সময়ের প্রচারণায় আরও জোরালো হবে বলে মনে করা হচ্ছে।