
মৌলভীবাজার সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে চা–শ্রমিকপুত্র নিহত
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মুরইছড়া চা–বাগানসংলগ্ন বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে সুখিরাম উরাং নামে বিশ বছর বয়সী এক চা–শ্রমিকপুত্র নিহত হয়েছেন। নিহত সুখিরাম মুরইছড়া চা–বাগানের মৃত দাছনু উরাংয়ের ছেলে। সীমান্তঘেঁষা এলাকায় তাদের পারিবারিক চাষের জমি রয়েছে এবং এসব কাজে তিনি প্রায়ই ওইদিকে যাতায়াত করতেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সুখিরামের একটি গরু সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের জিরো লাইনে ঢুকে গেলে তিনি গরুটি ফিরিয়ে আনতে দ্রুত সেখানে যান। তাঁর পরিবারের দাবি, সুখিরাম গরুটিকে ধরতে এগোতেই বিএসএফ সদস্যরা কোনো সতর্কতা বা কথোপকথন ছাড়াই তাকে লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি ছুড়ে। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে শ্রমিকপল্লী ও আশপাশের গ্রাম থেকে স্থানীয় মানুষ ছুটে আসেন এবং তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর পুরো মুরইছড়া বাগান এলাকা চরম উত্তেজনায় টেনশনপূর্ণ হয়ে ওঠে। চা–শ্রমিক সমাজের মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সীমান্তে একের পর এক নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিক গুলিতে নিহত হওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তারা মনে করেন, ছোটখাটো ভুলে কিংবা গবাদিপশু সীমান্ত অতিক্রম করলে বিনা কারণে গুলি চালানো মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। স্থানীয় নেতাদের ভাষ্য, সীমান্ত এলাকায় বহু পরিবার দশকের পর দশক ধরে কৃষিকাজ ও পশুপালন করে আসছে, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএসএফের আচরণ আরও কঠোর হয়ে পড়েছে, যা সাধারণ মানুষের মাঝে ভয় ও অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম আপছার জানান, সুখিরাম গরুটি ফিরিয়ে আনতে গেলে বিএসএফ তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে এবং হাসপাতাল নেওয়ার আগেই তিনি মারা যান। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রস্তুতি চলছে এবং রিপোর্ট পাওয়ার পর ঘটনাটির আরও বিস্তারিত উঠে আসবে। এ ছাড়া কেন এমন ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নিরপরাধ নাগরিক হত্যায় কঠোর প্রতিবাদ জানাতে এবং সীমান্তে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ বন্ধে সরকারের কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তারা মনে করেন, সুখিরামের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের শোক নয়; এটি সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তাহীনতার প্রতীক হিসেবে আবারও সকলের সামনে হাজির হলো।