
রাজশাহীর দুর্গাপুরের যুগীশো গ্রামে ১৯৭১ সালের গণহত্যা: ৪২ হিন্দু পুরুষকে নির্মমভাবে হত্যা, গড়া হয় গণকবর
HindusNews Desk :
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াল দিনগুলোতে পাকিস্তান আর্মির বর্বরতার অসংখ্য অধ্যায় ছড়িয়ে রয়েছে দেশের নানা প্রান্তে। সেই রকমই এক হৃদয়বিদারক অধ্যায় রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার যুগীশো গ্রামের স্মৃতিতে আজও দগদগে হয়ে আছে। ১৬ই মে, ১৯৭১—এই দিনটিতে পাকিস্তান আর্মি হামলা চালায় গ্রামের হিন্দু পল্লিতে এবং ঘটে এক ভয়াবহ গণহত্যা।
সেদিন ভোর থেকে গ্রামজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানি সৈন্যরা হিন্দু পাড়ায় ঢুকে ঘর থেকে বের করে আনে সকল প্রাপ্তবয়স্ক হিন্দু পুরুষকে। কোনো বিচার, কোনো জিজ্ঞাসাবাদ—কোনো কিছু ছাড়া জোর করে এক জায়গায় জড়ো করা হয় মোট ৪২ জনকে। উপস্থিত পরিবারদের সামনে চোখে–দেখা সন্ত্রাসের মতো করে একে একে সবাইকে হত্যা করা হয়। গ্রামের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে চিৎকার, কান্না আর গুলির শব্দে।
হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তান সেনারা মুসলিম প্রতিবেশীদের জোর করে বলেন কবর খুঁড়তে। অসহায়, ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে তারা বাধ্য হয়ে মাটি খুঁড়ে গণকবর তৈরি করেন। সেই খোলা কবরে স্তূপ করে ফেলা হয় ৪২ জনের নিথর দেহ। এরপর নির্মমতার শিখরে গিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা সেই গণকবরেই প্রস্রাব করে চলে যায়—যা ওই দিনটির অবমাননা, ঘৃণা আর ভয়ঙ্কর স্মৃতিকে আরও গভীর করে তোলে।
বিধবা হয়ে যাওয়া নারীদের ছবি বছরের পর বছরব্যাপী শোকের সাক্ষী হিসেবে উঠে এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। জাগো নিউজে প্রকাশিত ছবিগুলোতে দেখা যায়—যুগীশো গ্রামের সেই নারীরা আজও বুক চেপে বহন করছেন স্বামী হারানোর ব্যথা, সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর প্রজন্মান্তরে টিকে থাকা দুঃসহ স্মৃতি।
যুগীশো গণহত্যা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর পরিকল্পিত হিন্দু নিধন অভিযানের একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বহুবার আলোচিত হয়েছে। আল-জাজিরার প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়—কীভাবে প্রান্তিক হিন্দু জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে দমন–পীড়ন, হত্যা ও নির্যাতন চালানো হয়েছিল।
আজও অঞ্চলের মানুষ ১৬ই মে দিনটিকে স্মরণ করে নীরবতার মাধ্যমে—যেখানে গণহত্যার সেই স্থান দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের করুণ সাক্ষী হয়ে। যুগীশো গ্রামের মানুষের কাছে এ দিনটি কেবল স্মরণ নয়, বরং ন্যায়ের অধিকার, স্বীকৃতি ও ইতিহাসকে অক্ষুণ্ণ রাখার দাবি।