
হুমায়ুন কবীরের বাবরি মসজিদ তৈরির প্রস্তাব সংবিধান–বিরোধী! কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় ‘বাবরি মসজিদ’ নির্মাণের ঘোষণা ঘিরে ক্রমেই তীব্র হচ্ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর সম্প্রতি প্রকাশ্যে জানান যে ৬ ডিসেম্বর, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনেই তিনি নতুন একটি মসজিদের শিলান্যাস করবেন এবং সেটির নামই হবে ‘বাবরি মসজিদ’। তাঁর এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করেই রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় ওঠে, আর সেই প্রস্তাবটিকে সরাসরি সংবিধান-বিরোধী দাবি করে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন এক আইনজীবী। তাঁর যুক্তি—ভারতের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতার যে ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে, সেই জায়গাটিকে আঘাত করছে এই ঘোষণা; অযোধ্যার ঐতিহাসিক সংবেদনশীল ঘটনার সাথে একই নাম ব্যবহার করা সমাজে উত্তেজনা ছড়াতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি করে।
বৃহস্পতিবার মামলাটি হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পালের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে এবং খুব দ্রুত শুনানির সম্ভাবনাও ইঙ্গিত দেয়। আদালত সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহেই এই জনস্বার্থ মামলার প্রাথমিক শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ হুমায়ুন কবীরের ঘোষণার পর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস তাকে কার্যত দূরে সরিয়ে দেয়। বহরমপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার কিছুক্ষণ আগেই দল আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় যে হুমায়ুনের সঙ্গে তৃণমূল আর কোনো সম্পর্ক রাখবে না। সাংবাদিক বৈঠকে ফিরহাদ হাকিম স্পষ্টভাবে বলেন যে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন ঘোষণার দায় তৃণমূল নেবে না এবং হুমায়ুন যা করছেন, তা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
অপরদিকে হঠাৎ সাসপেনশনের পরেও নিজের অবস্থান থেকে একচুলও সরে আসতে চাননি হুমায়ুন কবীর। তিনি দাবি করেন যে তাঁর সিদ্ধান্ত জনগণের স্বার্থে এবং তাঁকে অন্যায়ভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তিনি একইসঙ্গে জানান, ২২ ডিসেম্বর তিনি একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা করবেন এবং ৬ ডিসেম্বরের শিলান্যাস অনুষ্ঠানও আগের মতোই হবে। এমনকি বৃহস্পতিবারই মসজিদের জন্য নির্দিষ্ট জমিও চিহ্নিত করা হয়েছে বলে তিনি নিজেই সাংবাদিকদের জানান।
এদিকে তাঁর ঘোষণার পরে মুর্শিদাবাদে উদ্বেগের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে, কারণ বাবরি মসজিদের নাম ব্যবহার করে নতুন স্থাপনা নির্মাণের প্রস্তাব ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। হাই কোর্টে করা জনস্বার্থ মামলায় আবেদনকারী আইনজীবী উল্লেখ করেছেন যে এই উদ্যোগ দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে এবং সংবিধানের মৌলিক মূল্যবোধের পরিপন্থী হওয়ায় আদালতের হস্তক্ষেপ জরুরি।
মামলার ফলাফল কী দাঁড়ায় এবং আদালত কোন নির্দেশ দেয় তা এখন রাজনৈতিক মহলে গভীর আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। হুমায়ুন কবীরের সিদ্ধান্ত, তৃণমূলের অবস্থান এবং আদালতের রায়—সব মিলিয়ে আগামী কয়েকদিন বেলডাঙা থেকে কলকাতা পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হতে পারে বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা।