
৬ ডিসেম্বর: স্বাধীন বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতির ঐতিহাসিক দিন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা | ৬ ডিসেম্বর
আজ ৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ও গৌরবোজ্জ্বল দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ভারতের এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থানকে সুদৃঢ় করে এবং বিজয়ের পথকে ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে এ দেশের সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতার লক্ষ্যে মরণপণ লড়াই চালিয়ে যান। পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার মুখে সে সময় প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নেয়, যা ভারতের জন্য এক বিশাল মানবিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
এমন এক প্রেক্ষাপটে, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দেশটির লোকসভায় দাঁড়িয়ে এক ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন। তিনি বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের কথা জানান। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা হয় এবং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবি আইনগত ও নৈতিক ভিত্তি পায়।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই স্বীকৃতি ছিল মুক্তিযুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এক সিদ্ধান্ত। এর ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ অন্যান্য মিত্র রাষ্ট্রগুলোর জন্য বাংলাদেশের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়া সহজ হয়। এই স্বীকৃতির মাত্র ১০ দিনের মাথায়, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।
ঐতিহাসিক এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভারত—উভয় দেশে দিনটি ‘মৈত্রী দিবস’ (Maitri Diwas) হিসেবে পালিত হয়। দুই দেশের সরকার ও জনগণ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে একাত্তরের সেই উত্তাল দিনগুলোতে গড়ে ওঠা পারস্পরিক সহযোগিতা, বন্ধুত্ব ও আত্মত্যাগের ইতিহাসকে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ৬ ডিসেম্বরের এই স্বীকৃতি নিছক কোনো কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল না; বরং এটি ছিল ন্যায়, মানবতা ও মুক্তির পক্ষে একটি বলিষ্ঠ অবস্থান। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মজবুত ভিত্তি হিসেবে এই দিনটি ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।