ফকিরহাটে গুপ্তধনের খোঁজে ৫০০ বছরের প্রাচীন পাতাল শিবমন্দিরে অবৈধ খনন : উদ্বিগ্ন স্থানীয় সনাতনী সম্প্রদায়, প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপের দাবি

3 days ago
VIEWS: 75

HindusNews ডেস্ক :
বাগেরহাটের ফকিরহাটে প্রায় পাঁচশো বছরের ঐতিহাসিক পাতাল জোড়া শিবমন্দিরকে ঘিরে শঙ্কাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কালের বিবর্তনে ভগ্নপ্রায় হয়ে পড়া এই প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনাটির ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গে সম্প্রতি একটি কুচক্রী মহল রাতের আঁধারে গুপ্তধনের আশায় অবৈধ খনন চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার ও নিরাপত্তার অভাবে অবহেলিত থাকা মন্দিরটির অবশিষ্ট অংশ আজও স্থানীয়দের আধ্যাত্মিক বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু অবৈধ খননের কারণে তা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

গত বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়—চুন, সুরকি ও পোড়া মাটির সমন্বয়ে গড়া মন্দিরের স্থাপত্যের বেশিরভাগ অংশ ভেঙে পড়েছে। ভগ্ন দেয়ালের ফাটলে জন্ম নেওয়া গাছপালা মন্দিরটিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে। মন্দিরের পাশে বনজঙ্গলের ভেতরে পাতাল সুড়ঙ্গের মুখে সদ্য খনন করা মাটির স্তুপ স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১৫–২০ ফুট উঁচু ঢিবির নিচে থাকা সুড়ঙ্গের মুখে রাতের অন্ধকারে বহু দিন ধরেই অজ্ঞাত লোকজন খনন চালাচ্ছে।

মন্দির কমিটির সদস্যরা জানান, মাটি খুঁড়ে সুড়ঙ্গের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে প্রায় ২৫ ধাপ ভূগর্ভ পর্যন্ত খনন করা হয়েছে। দিনের আলোয় সুড়ঙ্গের মুখে গিয়ে কমিটির সদস্যরা সাবল, কোদাল, ঝুড়ি, বালতি ও এমনকি একটি ত্রিশূল পড়ে থাকতে দেখেন। তাদের দাবি—এটি সংগঠিত একটি দলের কাজ, যারা রাতের আঁধারে নিয়মিতই এ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

উত্তর-পশ্চিম পিলজঙ্গ ইউনিয়নের এই জোড়া শিবমন্দির স্থানীয়ভাবে অত্যন্ত প্রাচীন ধর্মীয় নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে—মন্দিরের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গে সোনার প্রতিমা, কষ্টিপাথরের মূর্তি, স্বর্ণমুদ্রা ও অন্যান্য মূল্যবান ধনসম্পদ লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রায় ২৫ বছর আগে এখানকার দুইটি কষ্টিপাথরের মূল্যবান মূর্তি চুরি যাওয়ার পর থেকে নিরাপত্তা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।

স্থানীয় প্রবীণ সাধন কুমার দাস এবং সুজিত কুমার দাস জানান, পঞ্চদশ শতাব্দীতে এই এলাকায় ৩৬০ ঘর ব্রাহ্মণ বসবাস করতেন। এক সাধু ব্রাহ্মণের অলৌকিক কাহিনি ঘিরে ডাকাতরা তাদের অনুষঙ্গ ত্যাগ করে এ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাদের অর্জিত সম্পদ দেবীর পাদপীঠে উৎসর্গ করেন—এমন কিংবদন্তি আজও স্থানীয়দের মুখে মুখে ফেরে। পাতাল সুড়ঙ্গের সিঁড়ি ডান-বাম দিকে ভাগ হয়ে মাটির নিচে আরও কয়েকটি কক্ষের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয় বলে তারা জানান।

দেশভাগের পর পুরোহিত বীরেশ্বর ভট্টাচার্য ভারতে চলে গেলে মন্দিরটি অরক্ষিত হয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে বনজঙ্গলে আড়ালে চলে যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে প্রবেশপথ সংস্কার করা হলেও মূল স্থাপনা ও সুড়ঙ্গের বিষয়ে নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা।

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় সনাতনী সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। খনন বন্ধ, সুড়ঙ্গ সিলগালা, প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে সাইট সংরক্ষণ এবং স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য তারা জরুরি ভিত্তিতে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তবে মন্দির কমিটির একজন সদস্য অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী একটি মহল থানায় অভিযোগ না করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছে, ফলে তারা নিজেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনা আইরিন বলেন, “বিষয়টি আগে জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাস্টডিয়ান মো. যায়েদ জানান, “মন্দিরটি অত্যন্ত পুরোনো। সুড়ঙ্গে খনন হচ্ছে—এটি জানা ছিল না। তবে মন্দিরটি অবশ্যই সংরক্ষণ করা উচিত।”

ঐতিহ্যবাহী এই পাতাল শিবমন্দির রক্ষায় প্রশাসনের দ্রুত উদ্যোগ না নিলে অমূল্য প্রত্ননিদর্শন ও ধর্মীয় স্মারক ধ্বংসের ঝুঁকি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন