
নেত্রকোনায় কোন পদক্ষেপ নেই বৃটিশ অর্থমন্ত্রী নলিনী রঞ্জনের পৈতৃক বাড়ি সংরক্ষণের
বিজয় চন্দ্র দাস, নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
দীর্ঘদিন ধরে অনাদর আর নজরদারির অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী নলিনী রঞ্জনের পৈতৃক বাড়ি। বৃটিশ আমলে স্থাপিত রাজনৈতিক ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি সংরক্ষণ করতে নেই কোন উদ্যোগ এমনটি দাবি করছেন এলাকার সচেতন মহল।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, যুক্ত বাংলার বৃটিশ অর্থমন্ত্রী নলিনী রঞ্জন সরকার ১৮৭২ সালে জেলার কেন্দুয়া উপজেলার সাজিউরা গ্ৰামে অবস্থিত এ বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মানব কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার ইচ্ছে নিয়ে রাজনীতি সচেতন নলিনী রঞ্জন ছাত্রজীবনের শেষের দিকে ভারতের কলকাতা চলে যান। কলকাতার বড় বড় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অতি অল্প সময়ের মধ্যে এই মেধাবী সংগঠক ও নেতা জনমত অর্জন করতে সক্ষম হন।বৃটিশ আমলে কলকাতায় তিনি প্রথম বাঙালি মেয়র ও পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।১৯৪৭ সালের পর দেশ তার পরিবারের লোকজন বিপুল পরিমাণ জমি জমা ও বাড়িঘর ফেলে ভারতের নাগরিক হিসেবে জীবন যাপন শুরু করেন।
কেন্দুয়া উপজেলার সাজিউরা গ্ৰামে ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।এই বাড়িতে প্রবেশ করলে যে কোন বিবেকবান মানুষের বিবেক থেমে যায়। সড়ক থেকে বাড়িতে প্রবেশ পথে চোখে পড়ে পুকুরের পাশে দুটি সুউচ্চ ফলক। এগুলো জমিদারি আমলের ঐতিহ্য বহন করে আসছে ।এরপর শানবাধানো ঘাটের জলসিঁড়ি দিয়ে উঠানামার কারুকার্যময় ঘাট বিশেষভাবে দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নেয় অনায়াসে।
তারপর পুকুর থেকে ভেতরে প্রবেশ করলে চোখ থেমে যায় একটি পুরনো ভবনের দিকে। ভবনটি লতাপাতা দিয়ে ঘেরা। ভবনের উপরের ছাদের নীচে থেকে ভেঙ্গে পড়ছে পলেস্তারা। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠা যায়। অনেক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে অনেক আগেই।এর চারদিকে জঙ্গল আর ঘন গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ ছেয়ে আছে।কে বুঝবে একদিন এখানে আসতো দেশ-বিদেশের নামীদামী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মেতে উঠতোধ চারদিক।
বিশাল বাড়ির একদিকে একটি মন্দির। একসময় ওই মন্দিরে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোত বিভিন্ন উৎসব।আজ কালের আবর্তে নজরদারির অভাবে এটি শুধুমাত্র অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।এখন গ্ৰামের লোকেরা সকলে মিলে মিশে মাটির মূর্তিতে পুজা পার্বণে অংশগ্রহণ করেন। অবশ্য কয়েকটি মূর্তি তৈরি করে উৎসবের আমেজ নতুন করে সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছেন গ্ৰামবাসী।
আবার অন্যদিকে নজরদারির অভাবে কিছু সুবিধাবাদী লোক নলিনী রঞ্জনের পৈতৃক জমি বন্দোবস্ত নিয়ে বসবাস করছে। কিছু সাধারণ আয়ের মানুষ নলিনী রঞ্জনের পৈতৃক জমিতে ফসল উৎপাদন করে পরিবার চালিয়ে আসছেন।কেউ কেউ নলিনী রঞ্জনের পূর্ব পুরুষদের বংশ বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন।প্রশাসন ও দর্শনার্থীদের প্রবেশ পথে ও তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী রোকন উদ্দিন জানান, অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই বৃটিশ অর্থমন্ত্রী নলিনী রঞ্জনের পৈতৃক বাড়িটি। এটি সংরক্ষণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তবে এজন্য সংস্কৃতি কর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশিত করে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।এতে করে একটি রাজনৈতিক ঐতিহ্যবাহী বাড়ি আবার ফিরে পেতে পারে।
বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের জেলা কমিটির সভাপতি শামীম তালুকদার বলেন, বৃটিশ অর্থমন্ত্রী নলিনী রঞ্জনের পৈতৃক ভিটা রক্ষা জরুরি হয়ে পড়েছে। এজন্য রাজনীতিবিদ, শিল্পী ও সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তাহলে এ ব্যাপারে এখনও নতুন করে পদক্ষেপ গ্ৰহণ করা যায়, এতে সফলতা আসতে পারে।
জেলা উদীচি শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নলিনী রঞ্জনের পৈতৃক ভিটা রক্ষা কারো একার কাঐ ও দায়িত্ব নয়। এজন্য বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্ৰহণ করতে হবে। বাড়িটিতে টিকার জন্য এলাকাবাসী দর্শনার্থীদের বিশ্রাম ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য ব্যবস্থা নিতে পারেন। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কথা বলে সরকারিভাবে পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়।
জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমান বলেন, আমি জেলায় নতুন এসেছি। তবে অনলাইনে বৃটিশ অর্থমন্ত্রী নলিনী রঞ্জনের পৈতৃক বাড়িটি দেখেছি। এটি সংরক্ষণ করতে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য সরেজমিনে গিয়ে প্রত্যক্ষ করে পরিকল্পনা গ্ৰহণ করতে হবে।এর উর্এদ্ধতন দায়িত্ব সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।