

রংপুরের তারাগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় ও স্ত্রী সুবর্ণা রায়কে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় ঐক্য পরিষদের উদ্বেগ প্রকাশ
জয় দাস,নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের উত্তর রহিমাপুর চাকলা গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় (৭৫) এবং তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা রায় (৬০)–এর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার সকালেই এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এই মর্মান্তিক ঘটনা, যা মুহূর্তেই শোকের আবহ তৈরি করে পুরো অঞ্চলে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সকালেও স্বাভাবিকভাবে ঘর থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় সন্দেহ হয় প্রতিবেশীদের। পরে মই বেয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে দেখা যায়—ডাইনিং রুমে পড়ে আছে মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায়ের নিথর দেহ, আর রান্নাঘরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা রায়। দ্রুত পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
বাড়ির দীর্ঘদিনের তত্ত্বাবধায়ক দীপক চন্দ্র রায় জানান, তাঁর পরিবার প্রায় ৪০–৫০ বছর ধরে বাড়িটির দেখভাল করেন। প্রতিদিনের মতো কাজ করতে এসে তিনি লক্ষ্য করেন, সকাল ৭টার পরও কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তিনি প্রতিবেশীদের ডাকেন। পরে সবার উপস্থিতিতে ঘরে ঢুকে পাওয়া যায় এই ভয়াবহ দৃশ্য।
নিহত যোগেশ চন্দ্র রায় ছিলেন স্থানীয় চাকলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক। ২০১৭ সালে তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁদের দুই ছেলে—বড় ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় থাকেন জয়পুরহাটে, আর ছোট ছেলে রাজেশ খান্না চন্দ্র রায় ঢাকায় পুলিশ সদস্য হিসেবে কর্মরত। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই গ্রামেই শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতেন।
খবর পেয়ে সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আশপাশের মানুষ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোনাব্বর হোসেন এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী হোসেন। পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত নৃশংসতার ইঙ্গিত বহন করে এবং বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এক প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি বলেছে, এমন ঘটনা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনে চরম শঙ্কা সৃষ্টি করেছে, যা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তারা অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
প্রেস বিবৃতিতে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন,
“একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর স্ত্রীকে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যা জাতি হিসেবে আমাদের লজ্জায় ফেলে। আমরা দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করছি।”
মর্মান্তিক এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখনো এলাকায় শোক ও আতঙ্কের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবার, এলাকাবাসী এবং মুক্তিযোদ্ধা সম্প্রদায় দ্রুত ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করছেন।