
চট্টগ্রামে জামায়াত প্রার্থীকে ঢাক–উলুধ্বনিতে বরণ, সনাতন ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ব্যতিক্রমী সংবর্ধনা
HindusNews ডেস্ক :
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের নির্বাচনি এলাকায় সম্প্রতি ঘটে গেছে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য, যা সামাজিক মাধ্যমে রোববার রাত থেকে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মিরসরাইয়ের হাইতকান্দি ইউনিয়নের জেলেপাড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আয়োজিত একটি উঠান বৈঠকে অংশ নিতে গেলে জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমানকে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, ফুল ছিটিয়ে এবং উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয় স্থানীয় সনাতনী ও জেলে সম্প্রদায়ের মানুষজন। কয়েকশ লোক এই সংবর্ধনায় অংশ নেয় এবং ‘দাঁড়িপাল্লা’ স্লোগানও দিতে থাকে। নারীরা উলুধ্বনিতে অনুষ্ঠানের আবহকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেন। এ ধরনের দৃশ্য নির্বাচনের মাঠে অন্য কোনো প্রার্থীর ক্ষেত্রে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সাইফুর রহমান গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন এবং দুটি পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত উঠান বৈঠক, গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা করে আসছেন। শুক্রবার তিনি মসজিদে মসজিদে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করেন। পাশাপাশি নিজামপুরসহ নানা এলাকায় বৌদ্ধ সম্প্রদায় ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে তাকে সংবর্ধনা দিয়েছে। কোথাও কোথাও স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাকে নিয়ে বাড়ির উঠানে গানের আসরও বসিয়েছেন, যা এলাকাজুড়ে এক নতুন ধরনের রাজনৈতিক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।
জেলে সম্প্রদায়ের বিশেষ আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান HindusNews-কে বলেন, জেলেদের মাছ ধরার প্রচলিত আইনের কারণে তারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সাগরে নিষেধাজ্ঞা এলেই তাদের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তিনি নির্বাচিত হলে এই আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তাঁর এই অবস্থান জানার পর থেকেই জেলে, সনাতন ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ তাকে বিশেষভাবে স্বাগত জানাতে শুরু করেছে বলে জানান তিনি। তার ভাষায়, “তারা আমাকে ভালোবাসে, আমিও তাদের ভালোবাসি। মিরসরাই আমার রক্তে মিশে আছে। নির্বাচিত হলে সবাইকে সমান নাগরিক হিসেবে দেখে তাদের অধিকার নিশ্চিত করাই হবে আমার প্রথম দায়িত্ব।”
গণসংযোগের সময় তিনি এলাকার ভাঙা ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজসহ নানা সমস্যা নিজ হাতে নোটবুকে লিখে রাখছেন, যা স্থানীয়দের কাছে তাকে আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলছে। অনেকেই বলছেন, দীর্ঘদিন পর কেউ তাদের সমস্যার কথা এত মনোযোগ দিয়ে শুনছেন।
মিরসরাইয়ের নির্বাচনি মাঠে এখন এক ভিন্ন আবহ—সনাতন, বৌদ্ধ, জেলে ও মুসলিমসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষই যেনো এক প্রার্থীকে ঘিরে এক বিরল সামাজিক সংহতির ছবি আঁকছে। ঢাক–ঢোল আর উলুধ্বনিতে বরণ করার দৃশ্য সেই আবহকেই আরও গভীর করেছে।