শত বছরের ঐতিহ্য গুঠিয়ার সন্দেশ স্বাদে-ঘ্রানে অনন্য

16h ago
VIEWS: 42

সুমন দেবনাথ, বরিশাল প্রতিনিধি :

বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় বরিশাল-বানারীপাড়া মহাসড়কের মিডেল পয়েন্টে অবস্থিত গুঠিয়ার সন্দেশ বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। স্বাদে অনন্য এ সন্দেশে লেগে থাকে খাঁটি গরুর দুধের টাটকা ঘ্রান। প্রায় শত বছর ধরে বরিশালের বাজার গুলোতে সুনামের সহিত টিকে রয়েছে গুঠিয়ার সন্দেশ। জেলায় নানা রকমের বৈচিত্র্যপূর্ণ মিষ্টি পাওয়া গেলেও এসব মিষ্টির মধ্যে বরিশাল-বানারীপাড়া সংযোগ সড়কের পাশে উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়ার সন্দেশ বিখ্যাত।

ঐতিহ্যবাহী এই সন্দেশ পাওয়া যায় বরিশাল শহর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে বাবুগঞ্জ ও বানারীপাড়ার সীমান্তবর্তী উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া বাজারের মিষ্টির দোকানগুলোতে। বরিশাল থেকে সড়ক পথে বানারীপাড়া যেতে পথে পড়ে, দারোগার হাট ও গুঠিয়া বাজারে আরও অন্তত ১০টি মিষ্টির দোকানে বর্তমানে এই সন্দেশ তৈরি ও বিক্রি হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া থেকে সন্দেশ তৈরির কৌশল শিখে আসেন গুঠিয়া এলাকার সতীশ চন্দ্র দাস নামের এক ময়রা। সেই কৌশলের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে তিনি ১৯৬২ সালে তৈরি করেন ঐতিহ্যবাহী এই সন্দেশ যা গুঠিয়ার ছানার সন্দেশ নামে সুপরিচিত। বংশ পরম্পরায় সে ঐতিহ্য এখনও বহমান। দূর থেকে এই সন্দেশ দেখতে অনেকটা শিউলী ফুলের মতো। সতীশ ময়রা সন্দেশ তৈরি শিখিয়েছিলেন বাদশা হাওলাদারকে।সতীশ ময়রা ও বাদশা হাওলাদার দুজনের কেউই এখন আর বেঁচে নেই। গুঠিয়ার গ্রাম্য হাটের জৌলুস কমেছে, পাশের বিশাল খাল তার নাব্যতা হারিয়েছে। কিন্তু সন্দেশের বাজার আজও জমজমাট। ব্যাবসায়ীরা বলেছেন আন্তর্জাতিক বাজার পেলে সেখানেও বাজিমাত করবে গুঠিয়ার সন্দেশ। ভোক্তাদের দাবি সুস্বাদু ও অত্যন্ত জনপ্রিয় এই খাদ্যপন্যকে জিআই পন্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার।

স্থানীয় প্রবীণরা জানান বাবুগঞ্জের মাধবপাশায় জমিদার বংশের পতন ও প্রাচীন জনপদ চন্দ্রদ্বীপের রাজধানী হয়ে ওঠার সাথে এই সন্দেশের ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। তবে সে ইতিহাস সঠিকভাবে কোথাও লিপিবদ্ধ নেই।

সন্দেশ সাধারণত নরম হয়। কিন্তু গুঠিয়ার সন্দেশ কড়াপাকের। এজন্য এই সন্দেশ হয় কিছুটা শক্ত ও শুষ্ক। এই সন্দেশ তৈরির প্রধান উপকরণ দুধ ও চিনি, সাথে কিচমিচ। দুধ থেকে ছানা তৈরির পর তা দিয়ে সন্দেশ তৈরি হয়। দুধ থেকে ছানা কাটার পর পরই তা একটি বড় লোহার কড়াইতে পাকে বা জ্বালে দেয়া হয়। কাঁচা ছানার সাথে কিছু ময়দাও মেশানো হয়। পাকের পর তা মিহি করা হয়। পাক কম-বেশির ওপরেই এ সন্দেশের স্বাদ ও গুণগত মান নির্ভর করে।

গুঠিয়ার সন্দেশের রং সাদা। স্বাদে-ঘ্রানে অনন্য এ সন্দেশে লেগে থাকে দুধের টাটকা ঘ্রাণ। এই সন্দেশ গুঠিয়ার প্রায় শত বছরের ঐতিহ্য।বিখ্যাত এই সন্দেশের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন এখানকার বেশ কয়েকজন কারিগর। নিকুঞ্জ মিস্ত্রি তাঁদেরই একজন। তার বয়স এখন ৬০ বছর। বিখ্যাত এই সন্দেশের প্রস্তুত প্রণালি শিখিয়েছেন ছেলেকেও । এই বাজারে আরও ৮/৯ জন এখনও এই সন্দেশের ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে আছেন। গুঠিয়া সন্দেশের কেজি সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টির মতো সন্দেশ থাকে।

গুঠিয়া বাজারে যে কয়টি সন্দেশের দোকান চালু রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম মাহিয়া মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। এর স্বত্বাধিকারী টিটুল হাওলাদার জানান প্রতিদিন যত মানুষ এই বাজারে মিষ্টি কিনতে আসেন তার আশি ভাগই সন্দেশ নিতে আসেন। সন্দেশ শুধু নিজে খান এমন না স্বজনদের জন্যও নিয়ে যান। এমনকি দেশের বাইরেও অনেকে নিয়ে যায়।

সন্দেশ তৈরির কারিগর শ্যামল চন্দ্র ভদ্র বলেন,আমার পূর্বপুরুষ ছিলেন সতীশ চন্দ্র দাস। তিনি যে পদ্ধতিতে সন্দেশ তৈরি করতেন বংশ পরম্পরায় আমরা এখনো সেই পদ্ধতিতেই সন্দেশ তৈরি করে থাকি। এজন্যই গুঠিয়ার বিখ্যাত সন্দেশের সাথে দেশের অন্য কোনো জায়গার সন্দেশের তুলনা হবেনা।

নিকুঞ্জ মিস্ত্রি বলেন, শীতকালে এবং বৈশাখে সন্দেশের চাহিদা বাড়ে। তিনি বলেন, ‘দুধ, এবং শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এখন খুব বেশি লাভ হয় না। তবু ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে মানের সঙ্গে আপস করি না।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন