
বেগম রোকেয়াকে ‘কাফির ও মুরতাদ’ আখ্যা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের
HindusNews ডেস্ক :
নারী জাগরণ, নারী অধিকার ও প্রগতিশীল চিন্তার প্রতীক বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান। দিবসটিকে ঘিরে যখন সারাদেশে রোকেয়ার অবদান স্মরণ করা হচ্ছে এবং চার বিশিষ্ট নারীর হাতে রাষ্ট্রীয়ভাবে বেগম রোকেয়া পদক তুলে দেওয়া হয়েছে, ঠিক সেই সময় সামাজিকমাধ্যমে এক শিক্ষকের এমন মন্তব্য জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বেগম রোকেয়ার একটি ফটো কার্ড শেয়ার করে তিনি লিখেছেন— “আজ মুরতাদ কাফির বেগম রোকেয়ার জন্মদিন।” এই পোস্টের সঙ্গে থাকা একটি দীর্ঘ লেখায় রোকেয়ার বিভিন্ন বক্তব্যকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমালোচনা করা হয়েছে, যা দ্রুতই নিন্দার ঝড় তোলে। পোস্টটি ভাইরাল হওয়ার পর বহু শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ এমন মন্তব্যকে অশোভন, উসকানিমূলক এবং নারী সমাজকে হেয় করার প্রচেষ্টা বলে উল্লেখ করেছেন।
পোস্টটির নিচে মন্তব্য করতে গিয়ে একজন ব্যবহারকারী ‘সরি স্যার’ লিখে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি ছবি জুড়ে দেন, যেখানে তিনি ‘আমিই রোকেয়া’ লোগোর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। ওই ছবি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম আগে শেয়ার করেছিলেন। এতে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, কারণ প্রগতিশীলতার প্রতীক একজন রাষ্ট্রনায়ক যাকে উদযাপন করছেন, সেই ব্যক্তিত্বকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ধর্মীয় অবমাননার ভাষায় আক্রমণ করেছেন।
জানা গেছে, এর আগেও ৫ ডিসেম্বর সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান বেগম রোকেয়ার লেখনী ও বক্তব্য নিয়ে ধর্মীয় সমালোচনামূলক আরেকটি পোস্ট করেছিলেন। এতে বিভিন্ন মহল মনে করছে, এটি তাঁর ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা।
২০০৯ সালে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে তাঁর একাডেমিক জীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার পর ২০১৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন এবং বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। একাডেমিক ও গবেষণার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় একজন শিক্ষকের এমন মন্তব্য শিক্ষাঙ্গনে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে—বিশেষত এমন একদিনে, যে দিন দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বেগম রোকেয়ার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অবদানকে সম্মান জানানো হয়।
বিতর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য সাংবাদিকরা বারবার ফোন করলেও সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান কোনো কল রিসিভ করেননি। তাঁর বক্তব্য না পাওয়া গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসমাজের একাংশ মনে করছেন, একজন রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বকে ধর্মীয় আক্রমণের ভাষায় অপমান করা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আওতায় পড়লেও তা দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং সমাজে বিভেদ উসকে দেয়ার শামিল।
এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পর এখন দেখা অপেক্ষা—রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় কিনা, এবং শিক্ষাঙ্গনে এমন উসকানিমূলক বক্তব্য নিয়ন্ত্রণে ভবিষ্যতে কী নীতি গ্রহণ করা হয়।