সীতাকুণ্ডের রহস্যময় পাতালকালী মন্দির: সত্যযুগের অলৌকিক ইতিহাসে ঘেরা এক নিষিদ্ধ শক্তিক্ষেত্র

14h ago
VIEWS: 13

জয় বনিক, নিজস্ব প্রতিবেদক :

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পাহাড়ি গহ্বরে লুকিয়ে আছে এমন এক রহস্যময় তীর্থস্থান, যার নাম উচ্চারণ করলেই ভক্তদের মনে শ্রদ্ধা ও বিস্ময়ের জন্ম হয়—পাতালকালী মন্দির। স্থানীয়দের ভাষায় এটি “উল্টা পাতালকালী”, কারণ এখানে যে কালী মাতার বিগ্রহ রয়েছে তা উল্টো অবস্থায় খোদাই করা। ভক্তদের দৃঢ় বিশ্বাস, কোনো মানবশিল্পীর হাত নয়—এই বিগ্রহটি স্বয়ং প্রকাশিত, অর্থাৎ দেবী নিজেই প্রকাশিত হয়েছেন সীতাকুণ্ডের পাথুরে খাদে।

মন্দিরটির অবস্থান যতটা রহস্যময়, তার ইতিহাসও ততটাই প্রাচীন। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, পাতালকালী মন্দিরের ইতিহাস প্রায় ৫০,০০০ বছর পূর্বের আদি সত্যযুগ পর্যন্ত বিস্তৃত। বলা হয়ে থাকে, এই স্থানেই পাতালপতি অহিরাবণের পুত্র মহীরাবণ শ্রী রামচন্দ্রকে বলি দেওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছিলেন। সেই দুঃসময়ে মা ভদ্রাকালীর আদেশে মহাবীর হনুমান মহীরাবণকে বধ করে রাম-লক্ষ্মণকে উদ্ধার করেন। সেই ঘটনার স্মৃতি ও বিশ্বাসের ধারায় এই অঞ্চলের কালী রূপ “উল্টা পাতালকালী” হিসেবে পরিচিতি পায়। সত্যযুগে চণ্ডীযজ্ঞে অসুরবধের জন্য মানববলির প্রচলন ছিল—এমন উল্লেখ বহু পুরাণে পাওয়া যায়, আর সেই কার্য সম্পাদনও নাকি এই গহ্বরেই করা হত।

মন্দিরটিতে পৌঁছানো সহজ নয়। দুর্গম পাহাড়ি পথ, পিচ্ছিল শিলা, আঁকাবাঁকা খাদ বেয়ে নামতে হয় ভক্তদের। প্রতিটি পদক্ষেপেই লুকিয়ে থাকে বিপদ। প্রশাসনের বিশেষ অনুমতি ছাড়া এই পথে প্রবেশ নিষিদ্ধ। ঝুঁকিপূর্ণ পথ অতিক্রম করে যাঁরা দর্শনে যেতে সক্ষম হন তাঁদের মতে, সেখানে প্রবেশমাত্রই এক অদ্ভুত নীরবতা, শক্তির উপস্থিতি আর ভক্তির আবহ উপলব্ধি করা যায়। পাহাড়ের খাদে প্রবাহিত পাতালপুরীর ঝিরির জল এতটাই হিমশীতল যে, স্থানীয়দের দাবি—এমন ঠান্ডা ঝিরি সীতাকুণ্ড ছাড়া আর কোথাও নেই।

বিগ্রহের পাশাপাশি এখানে রয়েছে প্রাচীন শিবলিঙ্গসমূহ, যেগুলো পাথরের বিশাল বোল্ডার কেটে তৈরি। এছাড়াও দেখা মেলে হরগৌরি, অষ্টবসু, মন্দাকিনী গোপেশ্বর শিব ও অন্যান্য দেবদেবীর প্রাচীনস্থাপন। কথিত আছে, এই এলাকাতেই মহামুনি ভার্গব তপস্যা করতেন, আর বনবাসের সময় শ্রী রামচন্দ্রও এখানে এসেছিলেন।

পাতালপুরী নামে পরিচিত এ এলাকাকে ঘিরে আজও রয়েছে অসংখ্য রহস্য। কেউ কেউ দাবি করেন, গভীর রাতে পাহাড়ের ভেতর থেকে ধূপের গন্ধ ভেসে আসে। আবার কেউ বলেন, তারা দূর থেকে দীপ্ত আলোকছটা দেখেছেন, যা মুহূর্তেই মিলিয়ে যায়। স্থানীয়দের মতে, মা পাতালকালী আজও জাগ্রত, আর তাই তাঁর আশেপাশের পরিবেশে অনুভূত হয় এক বিশেষ আধ্যাত্মিক শক্তির স্পন্দন।

রহস্য, ইতিহাস, পৌরাণিক কাহিনি ও অলৌকিক বিশ্বাসের সমন্বয়ে পাতালকালী মন্দির বাংলা হিন্দু সমাজে এক অতুলনীয় পবিত্র স্থানের মর্যাদা পেয়েছে। যদিও পথটি দুর্গম, বিপজ্জনক, এবং মানুষের প্রবেশ সীমিত, তবুও যারা দর্শন করেন তাঁরা মনে করেন—এ সৌভাগ্য জীবনে একবারই আসে। পাহাড়ের নিস্তব্ধতা আর মাতৃশক্তির প্রাচীন প্রতিমা ভক্তদের মনে শান্তি, বিস্ময় ও শক্তির অনুভূতি জাগায়।

সীতাকুণ্ডের পাহাড়ের নিচে, অন্ধকার গহ্বরের গভীরে, হাজার বছরের রহস্য ঘেরা এই পাতালকালী যেন আজও বলে যায়—
“যে আসে ভক্তি নিয়ে, তাকে মা কখনও নিরাশ করেন না।”

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন