
বিশ্বখ্যাত সেতারসম্রাট পণ্ডিত রবিশঙ্কর: যিনি ভারতীয় সুরকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছিলেন অনন্য মাত্রায়
HindusNews ডেস্ক :
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রাণপুরুষ, সেতারের কিংবদন্তি পণ্ডিত রবিশঙ্কর আজও বিশ্বসংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে অমর। ১৯২০ সালের ৭ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের বারানসিতে জন্ম নেওয়া এই সংগীতগুরু ছিলেন বাংলাদেশের নড়াইল জেলার পৈতৃক ভিটির সন্তান। তাঁর জীবনের প্রতিটি সুর, প্রতিটি তাল ভারতীয় সংস্কৃতির গর্ব হয়ে উঠেছিল।
শৈশব থেকেই রবিশঙ্কর ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। নৃত্য, সরোদ ও সংগীতের মিশেলে গঠিত হয়েছিল তাঁর শিল্পীসত্তার ভিত। কৈশোরে ইউরোপ সফরের সময়েই তিনি সংগীতজগতের সঙ্গে নতুনভাবে পরিচিত হন। প্যারিসে কিংবদন্তি সঙ্গীতগুরু আলাউদ্দিন খাঁর সঙ্গে পরিচয় তাঁর জীবনকে নতুন পথে নিয়ে যায়। গুরু আলাউদ্দিন খাঁর মাইহারের কঠোর শিক্ষায় নিজেকে গড়ে তোলেন তিনি এক নিখুঁত সেতারবাদক হিসেবে।
১৯৫৪ সাল থেকে শুরু হয় তাঁর আন্তর্জাতিক যাত্রা। ইউরোপ ও আমেরিকার মঞ্চে ভারতীয় রাগ, তাল ও রাগিণীকে উপস্থাপন করে তিনি পাশ্চাত্যের সংগীতপ্রেমীদের হৃদয় জয় করেন। সেতারের মাধ্যমে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন তিনি। বিটলস ব্যান্ডের জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে তাঁর সখ্যতা এবং যৌথ পরিবেশনা বিশ্বসংগীতের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় রচনা করে।
কেবল সংগীত নয়, মানবতার প্রতীক হিসেবেও রবিশঙ্কর ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করে বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই কনসার্টের অর্থ সহায়তা পাঠানো হয় যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে। এভাবেই তিনি শুধু শিল্পী নন, মানবিকতারও দূত হয়ে উঠেছিলেন।
জীবনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সংগীতের সুরে মগ্ন ছিলেন এই মহান সেতারসম্রাট। আন্তর্জাতিক পুরস্কার, স্বীকৃতি ও সম্মানের পেছনে থেকেও তিনি ছিলেন এক সরল, গভীর, সংবেদনশীল মানুষ—যিনি শিল্পে খুঁজে পেয়েছিলেন সত্য, সৌন্দর্য ও মানবতার দ্যুতি।
মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করা হয় কেবল সেতারের মহান শিল্পী হিসেবে নয়, বরং এক এমন মানুষ হিসেবে যিনি ভারতীয় সংস্কৃতিকে বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দিয়েছেন অনন্য মর্যাদায়।
“সংগীত শুধু সুর নয়, এটা এক ধরনের প্রার্থনা”— এভাবেই রবিশঙ্কর চিরকাল বেঁচে থাকবেন তাঁর সেতারের প্রতিটি তারে, প্রতিটি রাগিণীতে।