
“যাদের পুত্র নেই, তাদের মুক্তি কীভাবে?”—গরুড়কে শ্রীবিষ্ণুর উত্তর: কন্যা-দৌহিত্রেই পিতামাতার স্বর্গলাভ
HindusNews ডেস্ক, ধর্মতত্ত্ব ও শাস্ত্র :
হিন্দু শাস্ত্রে বহুদিন ধরেই প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হলো যে শুধুই পুত্রই পিতামাতাকে ‘পুৎ’ নামক নরক থেকে উদ্ধার করতে পারে। কিন্তু গরুড় পুরাণ, স্মৃতিশাস্ত্র এবং মনুসংহিতার আসল ব্যাখ্যা বলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। কন্যা এবং কন্যার সন্তান (দৌহিত্র) পিতামাতার শ্রাদ্ধ ও পিণ্ডদানের পূর্ণ অধিকারী। শ্রীবিষ্ণু নিজেই এটি ঘোষণা করেছেন।
একদিন বৈকুণ্ঠ ধামে পক্ষীরাজ গরুড় উদ্বিগ্ন মুখে শ্রীবিষ্ণুর চরণে উপস্থিত হন। গরুড় বলেন, “হে প্রভু! আপনি বলেছেন পুত্রই পিতাকে নরক থেকে উদ্ধার করে। কিন্তু যাদের পুত্র নেই, যাদের শুধু কন্যা আছে, তারা কি মুক্তির অধিকারী নন?”
মুচকি হেসে শ্রীবিষ্ণু বলেন, “এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আমার সৃষ্টিতে পুত্র-কন্যার কোনো ভেদ নেই। যাদের পুত্র নেই, তাদের কন্যা বা দৌহিত্র—উভয়েই শ্রাদ্ধ ও পিণ্ডদানের সম্পূর্ণ অধিকারী।” মনুসংহিতা ও গরুড় পুরাণের শ্লোকেও বলা হয়েছে, কন্যা পুত্রের সমান। প্রভু জানান, দৌহিত্র অর্থাৎ কন্যার ছেলে যমলোকে দাদু-দিদার জন্য পিণ্ডদান করলে পুত্রের সমান ফল হয়।
শ্রীবিষ্ণু বিষয়টি আরও বোঝাতে একটি প্রাচীন কাহিনী উল্লেখ করেন। ধর্মদত্ত নামে এক ধার্মিক ব্রাহ্মণ ছিলেন, যার কেবল একটি কন্যা সুমতি ছিল। মৃত্যুর আগে তিনি ভগ্নহৃদয়ে বলেন, “আমার জল দেবার কেউ থাকবে না, আমি নরকে পড়ব।” কন্যা সুমতি এক ঋষির পরামর্শে সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর গর্ভে যে সন্তান জন্মাবে, সে-ই পিতার পিণ্ডদান করবে। পিতার মৃত্যুর পর সমাজ বিদ্রূপ করেছিল, “পুত্র নেই, মুক্তি নেই।” কিন্তু সুমতি শাস্ত্রীয় নিয়মে পিতার শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করেন। পরে তাঁর পুত্র জন্মায়, এবং বড় হয়ে গয়া গিয়ে দাদুর উদ্দেশ্যে পিণ্ডদান করে। সেই রাতেই ধর্মদত্ত স্বপ্নে কন্যাকে বলেন, “মা, তোর পুত্রের পিণ্ডে আমি মুক্তি পেয়েছি। কন্যা-পুত্রে কোনো ভেদ নেই।”
গরুড় পুরাণ অনুযায়ী, পিতৃশ্রাদ্ধ করার অধিকার ধারাবাহিকভাবে জ্যেষ্ঠ পুত্র, কনিষ্ঠ পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র, পত্নী, কন্যা, দৌহিত্র এবং শেষ বিকল্প হিসেবে ভাই বা ভাইপো। শাস্ত্রে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, পুত্র না থাকলে স্ত্রী শ্রাদ্ধ করতে পারেন, এবং স্ত্রী না থাকলে কন্যাই সম্পূর্ণ অধিকারী।
শ্রীবিষ্ণু গরুড়কে বলেন, যারা শুধু পুত্রের জন্য হাহাকার করে, তারা মায়ার বশবর্তী। কন্যা ভক্তিভরে শ্রাদ্ধ করলে পিতামাতা অবশ্যই মোক্ষ লাভ করেন। পুত্র-কন্যা শারীরিক ভেদ—আত্মার নয়।
যাদের পুত্র নেই, তাদের কোনো ভয় নেই। কন্যা বা কন্যার সন্তান পিণ্ডদান করলে তা শাস্ত্রে সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য এবং পিতামাতার আত্মা শান্তি লাভ করে। হিন্দু শাস্ত্র স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে, সন্তান মানেই সন্তান—সে ছেলে হোক বা মেয়ে।