বাড়ছে বিচ্ছেদের ধুম, সাক্ষ্য দিতে আদালতে ডাক পড়ছে পুরোহিতদের!

1 week ago
VIEWS: 69

বেঙ্গালুরুর:

বিবাহবিচ্ছেদের বাড়বাড়ন্তে ‘বিরক্ত’। নিজেদের প্রাঙ্গণে তাই বিয়ে নিষিদ্ধই করলেন বেঙ্গালুরুর একটি মন্দির কর্তৃপক্ষ! মন্দিরের পুরোহিতদের দাবি, বিচ্ছেদের ঘটনায় বার বার আদালতে গিয়ে সাক্ষী দিতে হচ্ছে তাঁদের। আর সম্প্রতি বিচ্ছেদের মামলা এত বেড়েছে যে তিতিবিরক্ত হয়েই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।মন্দিরচত্বরে বিয়ে না দেওয়ানোর সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বেঙ্গালুরুর উলসুরের সোমেশ্বর স্বামী মন্দির কর্তৃপক্ষ। চোল রাজবংশের আমলে তৈরি শতাব্দীপ্রাচীন মন্দিরটি বেঙ্গালুরুর সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম।কয়েক বছর আগে পর্যন্ত বিয়ের মরসুমে সোমেশ্বর স্বামী মন্দিরে বিয়ে করার ধুম পড়ত যুগলদের মধ্যে। কিন্তু এখন মন্দিরচত্বরে আর কোনও বিয়ের আসর বসছে না। কেউ বিয়ের আর্জি নিয়ে এলেও তাঁদের পত্রপাঠ বিদায় করছেন পুরোহিতেরা।কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে (সিএমও) এক ব্যক্তি অভিযোগ দায়ের করার পর মন্দিরের এই সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ্যে আসে। ওই যুবকের অভিযোগ ছিল, সোমেশ্বর স্বামী মন্দির কর্তৃপক্ষ তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে রাজি হননি।সিএমও-র তরফে ব্যাখ্যা চাওয়ার পর মন্দির কর্তৃপক্ষ এবং পুরোহিতেরা জানান, মন্দিরে বিয়ে করা দম্পতিদের বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় সাক্ষী দিতে তাঁদের আদালতে টানা হচ্ছে। আদালতে দৌড়োদৌড়ি করার কোনও ইচ্ছা নেই তাঁদের। তাই বিয়ে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত।মন্দির কর্তৃপক্ষ এ-ও জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে মন্দিরপ্রাঙ্গণে বিয়ে হয়েছে এমন যুগলদের বিচ্ছেদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বিচ্ছেদের সময় নথি যাচাইয়ের জন্য আবার মন্দিরচত্বরে ভিড় করছেন ওই দম্পতিরা। সব মিলিয়ে তাঁরা বিরক্ত বলে মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে।সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, মন্দির কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়েছেন, প্রায়শই বিচ্ছেদের মামলার সময় আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় বিয়ে দেওয়ানো পুরোহিতদের। আর সেই বিষয়টিই পুরোহিতদের মধ্যে বিরক্তির উদ্রেক ঘটাচ্ছে।

মন্দিরের কর্মকর্তারা এ-ও জানিয়েছেন, সোমেশ্বর মন্দিরে হওয়া ৫০টিরও বেশি বিয়েতে জটিলতা দেখা গিয়েছে গত দু’বছরে। বিচ্ছেদের মামলাও দায়ের হয়েছে। সাক্ষী দিতে বার বার আদালতে যেতে হয়েছে পুরোহিতদের। কিন্তু এক দশক আগেও পরিস্থিতি এ রকম ছিল না। বছরে বিচ্ছেদের মামলা হত পাঁচটিরও কম।

এ প্রসঙ্গে মন্দির কমিটির প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা ভি গোবিন্দরাজু বলেন, ‘‘অনেক যুগল বাড়ি থেকে পালিয়ে যান এবং বিয়ে করার জন্য জাল নথি উপস্থাপন করেন। কয়েক দিন পরে, ওই যুগলদের বাবা-মা উপস্থিত হন এবং কিছু ক্ষেত্রে আদালতে মামলা দায়ের হয়।’’

একসময় বিয়ের অনুষ্ঠান সোমেশ্বর স্বামী মন্দিরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিচ্ছেদের মামলা অনেক বেড়েছে। মন্দির কর্তৃপক্ষের কথায়, এই ধরনের বিচ্ছেদের মামলা ‘মন্দিরের ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করতে পারে’।

সোমেশ্বর স্বামী মন্দিরের পুরোহিতেরা জানিয়েছেন, মন্দিরটি প্রায় ১০০-১৫০টি বিয়ের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিল। কিন্তু ছ’-সাত বছর আগে বিয়ে করানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোনও ‘অপ্রীতিকর ঘটনা’র জেরে মন্দিরের ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুণ্ণ না হয় সে কথা মাথায় রেখেও মন্দিরে বিয়ে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে স্পষ্ট করেছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।বিয়ে বন্ধ হলেও মন্দিরটিতে অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেমন ভাবে পালন করা হত, তেমন ভাবেই করা হচ্ছে। শুধু বিয়ের অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে।যদিও মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মন্দিরে বিয়ে দেওয়ানোর সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে পুনর্বিবেচনা করে দেখা হতে পারে। তবে, আপাতত কোনও বিয়ের মণ্ডপ বসবে না মন্দিরচত্বরে।

সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে জানা গিয়েছে, সোমেশ্বর স্বামী মন্দির প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য ছিল, আইনি বিরোধ এড়ানো। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের থেকে সরকারি বার্তা পাওয়ার পর মন্দিরের নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যাখ্যা করেছেন, বিচ্ছেদের মামলায় সাক্ষী হিসাবে আদালতে ডাকা পুরোহিতদের অসুবিধা এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ভারতে, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে মন্দিরে বিয়ে করা অত্যন্ত শুভ বলে বিবেচিত হয়। দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত এবং ভগবান শিবের উদ্দেশ্যে নিবেদিত সোমেশ্বর মন্দিরটিও দীর্ঘ দিন ধরে হিন্দু বিবাহের জন্য পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

কিন্তু সোমেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে আতান্তরে পড়েছেন স্থানীয়দের একাংশও। এ নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম হয়েছে ভক্তদের মধ্যে। কিছু ভক্ত মন্দিরের ভাবমূর্তি বাঁচাতে পুরোহিতদের প্রয়াসের প্রশংসা করলেও অনেকে বিষয়টিকে সাংস্কৃতিক রীতিনীতিকে নষ্ট করার চেষ্টা বলে নিন্দা করেছেন।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন