
‘যে বংশে নারীরা সন্তুষ্ট, সেই বংশের শ্রীবৃদ্ধি নিশ্চিত’: সনাতন ধর্মে নারী কেন পূজনীয়?
দুরন্ত কুমার সাহা, ধর্মতত্ত্ব ডেস্ক:
সনাতন ধর্মে নারীকে কেবল সম্মানের আসনেই বসানো হয়নি, বরং তাকে পূজনীয় বা দেবীতুল্য মনে করা হয়। শাস্ত্র মতে, নারীই শক্তির প্রতীক। শক্তি ছাড়া যেমন কোনো সৃষ্টি বা পরিচালনা সম্ভব নয়, তেমনি নারীর সম্মান ও সন্তুষ্টি ছাড়া কোনো পরিবার বা বংশের শ্রীবৃদ্ধি সম্ভব নয়। দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী—এই সব দেবীর মাধ্যমেই নারীর সেই আদি শক্তি ও মহিমা যুগে যুগে প্রকাশিত হয়েছে।
নারীই শক্তি—শক্তি ছাড়া শিবও নিষ্ক্রিয়
সনাতন দর্শনে নারীর অবস্থান অত্যন্ত জোরালো। শাস্ত্রে বলা হয়েছে— “শক্তিহীনঃ শিবঃ শবঃ”। অর্থাৎ, শক্তি (নারী তত্ত্ব) ছাড়া স্বয়ং মহাদেব শিবও নিষ্ক্রিয় বা শবদেহের সমান। নারীকেই বলা হয় মূল শক্তি; যিনি সৃষ্টি, পালন ও সংহারের উৎস। এ কারণেই দুর্গা, কালী, লক্ষ্মী বা সরস্বতী—সবাই নারী রূপে পূজিতা হন।
মনুসংহিতার স্পষ্ট ঘোষণা
নারীর সম্মানের বিষয়ে মনুসংহিতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শ্লোকের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে—
“যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ”
এর অর্থ হলো, যেখানে নারীদের সম্মান ও পূজা করা হয়, সেখানেই দেবতারা আনন্দের সাথে অবস্থান করেন। পক্ষান্তরে, যে পরিবার বা সমাজে নারীরা অবমানিত হন, সেখানে হাজারো ধর্মীয় কর্ম করলেও তা ফলপ্রসূ হয় না।
মাতৃরূপে নারী সর্বোচ্চ সম্মানযোগ্য
হিন্দু শাস্ত্রে মা-কে ‘প্রথম গুরু’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। উপনিষদে বলা হয়েছে— “মাতৃদেবো ভব”, অর্থাৎ মাতাকে দেবীর মতো জ্ঞান করো। নারী কেবল সন্তান জন্ম দেন না, তিনি মানুষ গড়ার কারিগর। সৃষ্টির ধারাবাহিকতা এবং সমাজের ভিত্তি নারীর মাধ্যমেই রক্ষিত হয়।
শাস্ত্রবিদদের মতে, যে বংশে স্ত্রীলোকেরা বা নারীরা সন্তুষ্ট থাকেন, সেই বংশ নিশ্চিতভাবেই শ্রীবৃদ্ধি লাভ করে। নারী একদিকে জীবনদাত্রী মাতৃরূপ, অন্যদিকে জ্ঞানের আধার। তাই সনাতন ধর্মে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনকে ধর্মের অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে গণ্য করা হয়।