
পাকিস্তানের শ্রেণিকক্ষে ফিরছে সংস্কৃত, গীতা ও মহাভারত—নতুন ইতিহাসের সূচনা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
দেশভাগের প্রায় আট দশক পর পাকিস্তানের শিক্ষাঙ্গনে এক ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তনের সাক্ষী হলো দক্ষিণ এশিয়া। প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের কোনো স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্কৃত ভাষার পাঠদান শুরু হয়েছে। লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস (লুমস) চার ক্রেডিটের একটি সংস্কৃত কোর্স চালু করেছে, যা ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থী ও গবেষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, তিন মাসব্যাপী একটি সাপ্তাহিক কর্মশালার মাধ্যমে এই উদ্যোগের সূচনা হয়। কর্মশালায় শিক্ষার্থীদের উৎসাহ ও ইতিবাচক সাড়া দেখে লুমস কর্তৃপক্ষ এটিকে পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক কোর্সে রূপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই কোর্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কেবল সংস্কৃত ভাষাই নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন জ্ঞানতত্ত্ব, সাহিত্য ও দর্শনের সঙ্গেও পরিচিত হচ্ছে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কোর্সের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের মহাভারতভিত্তিক জনপ্রিয় টেলিভিশন ধারাবাহিকের বিখ্যাত থিম সং ‘হ্যায় কথা সংগ্রাম কি’-এর উর্দু রূপের সঙ্গে পরিচয় করানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে সংস্কৃত মহাকাব্যের ভাবধারা ও নৈতিক দর্শনকে আধুনিক ও স্থানীয় ভাষায় অনুধাবনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
লুমসের গুরমানি সেন্টারের পরিচালক ড. আলী উসমান কাসমি বলেন, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে সংস্কৃত ভাষার এক বিশাল কিন্তু দীর্ঘদিন অবহেলিত পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ রয়েছে। ১৯৩০-এর দশকে গবেষক জেসিআর উলনার এসব পাণ্ডুলিপির একটি ক্যাটালগ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পাকিস্তানের কোনো গবেষক এই অমূল্য সংগ্রহ নিয়ে আর কাজ করেননি। বর্তমানে বিদেশি গবেষকরাই মূলত এসব পাণ্ডুলিপি ব্যবহার করছেন।
ড. কাসমির মতে, পাকিস্তানের নিজস্ব গবেষকদের যদি সংস্কৃত ভাষায় প্রশিক্ষিত করা যায়, তবে এই ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানভাণ্ডার দেশীয় গবেষণার আওতায় আসবে। এতে ইতিহাস, দর্শন ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব চর্চার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।
লুমস কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে মহাভারত ও ভগবদ্গীতা বিষয়ক আলাদা কোর্স চালুর পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছে। ড. কাসমি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যেই পাকিস্তানে গীতা ও মহাভারত বিষয়ে দক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের গবেষক তৈরি হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ শুধু একাডেমিক ক্ষেত্রেই নয়, বরং উপমহাদেশের ভাগ করা ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে পুনঃসংযোগ স্থাপনের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পাকিস্তানের শ্রেণিকক্ষে সংস্কৃত, গীতা ও মহাভারতের প্রত্যাবর্তন দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক সহাবস্থানের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের ইঙ্গিত দিচ্ছে।