কল্পকাহিনীতে ঘেরা বানারীপাড়ায় ৫ শ বছরের ঐতিহ্য শিমুল গাছ

1 week ago
VIEWS: 65

সুমন দেবনাথ, বরিশাল প্রতিনিধি

বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠী ইউনিয়নে সবচেয়ে বৃহত্তম শিমুল গাছটি ঘিরে রয়েছে নানা কল্পকাহিনী। বহন করছে নানা ঐতিহ্য। ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনার স্বাক্ষী এই শিমুল গাছটি।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গাছটির বয়স পাঁচ থেকে ছয় শ বছর। এর ছায়ায় প্রশান্তি পান ক্লান্ত পথিক। তবে বৃহদাকৃতির এ গাছটি ধীরে ধীরে অস্তিত্ব হারাচ্ছে। তাই এটি বৈজ্ঞানিক উপায়ে রক্ষণাবেক্ষণের দাবি স্থানীয়দের। গাছটি ঘিরে পর্যটনেরও বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মত এলাকাবাসীর।

বানারীপাড়া উপজেলা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে সৈয়দকাঠী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামক স্থানে গাছটির অবস্থান। এই গাছটির নিচে অনেকেই মনের বাসনা পূরণের জন্য মানত হিসাবে গরু খাসি, মোরগ, জবাই করে রান্নাবান্না করে। গাছ দেখার জন্য আগত ভক্তদের উদ্দেশ্য একটাই যেন তাদের মনের বাসনা পূর্ণ হয়। অনেকে মনের বাসনা পূরণের জন্য মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালিয়ে পূজা-অর্চনা করেন। আবার অনেকে দেখার জন্য এসে গাছটিতে প্রিয়জনের নামও লিখে যায়। আগত ভক্তদের একটাই উদ্দেশ্য যেনো সৃষ্টিকর্তা তাদের মনের বাসনা পূর্ণ করে।

প্রায় ৫০ শতাংশ জমির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় ১৫০ ফুট লম্বা শিমুল গাছটির গোড়ার পরিধি প্রায় ৫৫ গজ। গাছটির গোড়ায় দাঁড়িয়ে কখনো মনে হয় পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে থাকার অনুভূতি। এর বিশালতায় ভরে যায় মন। এখানে এলে মুগ্ধতার আবেশে জড়িয়ে যায় দর্শনার্থীর হৃদয়। আলোচিত এই গাছটি দেখতে তাই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেক দর্শনার্থী।

স্থানীয় বাড়ির বাসিন্দা ও গাছের মালিক উত্তম সরকার বলেন, আমি বাপ-দাদার কাছ থেকে শুনে আসছি এই শিমুল গাছটির বয়স কমপক্ষে ৫ শ বছর হবে। আবার গ্রামের অনেকেই বলেছে, গাছটির বয়স ৬ শ বছর বা তারও বেশি হবে।

প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছটি বেড়ে উঠেছেও প্রাকৃতিকভাবেই। একসময় বৃহৎ আকৃতির এই শিমুল গাছটি পত্র-পল্লবে এতটাই ঘন ছিল যে এর নীচে রোদ, বৃষ্টি, কুয়াশাও পড়ত না। প্রচন্ড গরমের সময়ও গাছের নীচে পাওয়া যেত হিমেল শান্তির পরশ। পথিক, কৃষক থেকে শুরু করে নানা পেশা ও শ্রেণির লোকজন গাছের তলায় শুয়ে-বসে বিশ্রাম নিত। দুপুর ও বিকেলে দেখা যেত ডালে ডালে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন অনেকে।

গাছটি যার জমিতে আছে তিনি(উত্তম সরকার) তার বাবার পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে পেয়েছেন, তিনি আবার তার বাবার কাছ থেকে এভাবেই চলে আসছে শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে। কিন্তু কেউ বলতে পারে না এর জন্মলগ্নের সঠিক ইতিহাস।

গাছটিকে ঘিরে প্রচলিত রয়েছে নানান কল্পকাহিনী। স্থানীয়রা অনেকেই জানান, প্রায় সময় এখানে বিভিন্ন এলাকার লোকজন গাছটি একনজর দেখার জন্য এসে ভিড় করে থাকে। তারা মানত করে স্থানীয়দের মাঝে মোরগ-পোলাও মিষ্টি বিতরণ করেন। তারা মনে করে এ গাছে অলৌকিক কোন কিছু আছে। তাই মনের বাসনা পুরন করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে।

স্থানীয় বাসিন্দা অসীম সরকার জানান, এই পুরাতন শিমুল গাছটি কাটার জন্য অনেকেই চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন অবস্থাতেই কাটা যায় না। যে গাছটি কাটতে যায় সে অসুস্থ হয়ে যায়। শুনেছি অনেক আগে এ গাছ কাটতে এসে নাক, মুখ দিয়ে রক্ত এসেও মারা গিয়েছে। এটি আমাদের এলাকার পুরাতন একটি গাছ। এটি আমাদের ঐতিহ্য।

এলাকাবাসী মহানন্দ মন্ডল দোকানদার বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও নানামুখী অত্যাচারের কারণে ঐতিহ্যবাহী শিমুল গাছটি অস্তিত্ব হুমকিতে পড়েছে। ভেঙে পড়ছে বড় বড় ডালগুলো। সকলের সহযোগিতায় আমরা এই গাছটিকে সংরক্ষণের চেষ্টা করছি। দর্শনার্থী টানতে এলাকাবাসী বিশালাকৃৃতির দৃষ্টিনন্দন এ গাছটি সম্পর্কে প্রচারণা ও মূল রাস্তা থেকে গাছের গোড়া পর্যন্ত পাকা সংযোগ সড়ক তৈরিসহ বৈজ্ঞানিক উপায়ে রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন