
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ভারতীয় সেনা ও গোয়েন্দাদের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ: গোলাম পরওয়ার
HindusNews ডেস্ক :
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার দাবি করেছেন, ১৯৭১ সালের শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং এটি ভারতীয় সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় ভারতের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষার জন্য।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের উদ্যোগে ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব বক্তব্য দেন তিনি।
পরওয়ার বলেন, “বামপন্থি ও কলকাতাকেন্দ্রিক কিছু বুদ্ধিজীবী এবং ভারতীয় তাবেদার মহল পরিকল্পিতভাবে জামায়াতে ইসলামীকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করে আসছে। কিন্তু ইতিহাসের বহু গোপন তথ্য ও দলিল এখন সামনে এসেছে। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই হত্যাকাণ্ড ছিল ভারতীয় সেনা ও গোয়েন্দাদের একটি গভীর ষড়যন্ত্রের ফল।”
তিনি আরও বলেন, “১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ঠিক প্রাক্কালে ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পিতভাবে দেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। যেসব শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক ও শিল্পী স্বাধীন বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতেন, তাঁদের বেছে বেছে হত্যা করা হয়।”
জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা দাবি করেন, “৮ ডিসেম্বরের আগেই ভারতের ৩৬ জন সেনা ঢাকায় অবতরণ করেছিল—এর লিখিত রেকর্ড রয়েছে। সে সময় রাজধানী ঢাকাসহ পূর্ব পাকিস্তান কার্যত ভারতীয় সেনাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তখন পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার কিংবা আলবদর বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যেতে বা আত্মসমর্পণের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিল। এমন অবস্থায় তারা কীভাবে পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড চালাতে পারে—এই প্রশ্ন থেকেই যায়।”
পরওয়ার আরও বলেন, “রাও ফরমান আলীসহ বিভিন্ন ভারতীয় লেখকের বক্তব্য অনুযায়ী, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৪ ডিসেম্বরই আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় সেনাপ্রধানের ইচ্ছায় আত্মসমর্পণের দিন পিছিয়ে ১৬ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। এই দুই দিনের ব্যবধানেই পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “ভারত বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ভালোবাসা থেকে বা এ দেশের কল্যাণের জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়নি। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের কাছে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই তারা এই যুদ্ধে এগিয়ে আসে। ভারতের লক্ষ্য ছিল—বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও যেন চিরদিন তাদের অনুগত রাষ্ট্র হিসেবে থাকে।”
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। বক্তারা শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ইতিহাস অনুসন্ধান ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান।