বৈদিক সাহিত্যে ‘বুদ্ধিজীবী’: নিছক তাত্ত্বিক নন, সমাজ ও বিজ্ঞানের একনিষ্ঠ সাধক

1 week ago
VIEWS: 111

শ্রী দীপংকর সিংহ দীপ (ব্যাকরণ-বেদান্ত-স্মৃতি-পৌরোহিত্যতীর্থ) :

বৈদিক সাহিত্য কি কেবল পূজা-পার্বণ আর মন্ত্রপাঠের সমষ্টি? নাকি এর গভীরে লুকিয়ে আছে রাষ্ট্রচিন্তা, বিজ্ঞান এবং সমাজ গঠনের সুগভীর দর্শন? সাম্প্রতিক এক আলোচনায় বৈদিক শাস্ত্রের আলোকে ‘বিদ্বান’ বা বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংজ্ঞা ও দায়িত্ব নিয়ে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশ অগ্নিবীরের শিক্ষা ও শাস্ত্রার্থ সমন্বয়ক শ্রী দীপংকর সিংহ দীপ তাঁর এক প্রবন্ধে বেদের বিভিন্ন মন্ত্র উদ্ধৃত করে দেখিয়েছেন, বেদের চোখে বুদ্ধিজীবী কেবল পুঁথিগত বিদ্যার ধারক নন, বরং তিনি সমাজ ও বিজ্ঞানের পথপ্রদর্শক।

বুদ্ধিজীবী: বিজ্ঞানী ও শক্তির আধার

ঋগ্বেদ ও যজুর্বেদের বিভিন্ন মন্ত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ওই প্রবন্ধে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, বৈদিক যুগে বিদ্বানদের বিজ্ঞানমনস্ক হতে আহ্বান জানানো হয়েছে। ঋগ্বেদের ৪.৮.১ মন্ত্রে বিদ্বানদের ‘অগ্নি ও শক্তির বিজ্ঞানী’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পরমেশ্বরের সৃজনশীল শক্তিকে অধ্যয়ন করে তা মানবকল্যাণে ব্যবহার করাই একজন প্রকৃত বিদ্বানের কাজ। ঋগ্বেদের ৫.৩০.৩ মন্ত্র অনুযায়ী, জ্ঞান ও শক্তির যথাযথ প্রয়োগেই একজন বিদ্বান সমাজে শ্রেষ্ঠত্বের আসন লাভ করেন।

জ্ঞানের বারিধারা ও ন্যায়বিচার

একজন শিক্ষক বা বুদ্ধিজীবী সমাজে কী ভূমিকা পালন করবেন? ঋগ্বেদের ৫.৬৩.৬ মন্ত্রের আলোকে প্রতিবেদনে বলা হয়, মেঘ যেমন উদারভাবে বৃষ্টি বর্ষণ করে পৃথিবীকে উর্বর করে, একজন বিদ্বানকেও তেমনই প্রীতিময় ও বিচারশীল হয়ে সমাজে জ্ঞান বর্ষণ করতে হবে। এই জ্ঞান হবে সতেজকারী ও অশুভনাশক।

অন্যদিকে, যজুর্বেদের ১৩.৩৭ মন্ত্রে বিদ্বানদের ন্যায়বিচারক হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রাচীন পণ্ডিতদের দ্বারা প্রশিক্ষিত বিদ্বান ব্যক্তিরাই রথচালকের মতো সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং ন্যায়ের আসনে অধিষ্ঠিত হবেন।

পরিবেশ ও প্রযুক্তিতে বিদ্বানের দায়বদ্ধতা

বর্তমান যুগে পরিবেশ রক্ষা ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে যে আলোচনা চলছে, বেদে হাজার বছর আগেই তার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অথর্ববেদের ১৩.১.২৭ মন্ত্রে পৃথিবীকে ‘দেবগণের ধেনু’ বা গাভী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বিদ্বানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গবেষণা ও সংরক্ষণের মাধ্যমে এই পৃথিবীর সম্পদ আহরণ করতে, কিন্তু তা যেন কখনোই শোষণের পর্যায়ে না যায়। এছাড়া ঋগ্বেদের ৭.৩৭.২ মন্ত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিদ্বানদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, তাঁরা যেন অবকাঠামো নির্মাণ ও গবেষণার মাধ্যমে জাতির উন্নয়ন নিশ্চিত করেন।

আধুনিক যুগে প্রাসঙ্গিকতা

শ্রী দীপংকর সিংহ দীপ তাঁর আলোচনায় উল্লেখ করেন, আজকের দিনে জ্ঞান যখন ক্ষমতার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, তখন বেদের এই বার্তা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেন, “বেদের দৃষ্টিতে বুদ্ধিজীবী কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা নন। তিনি সমাজের প্রাণকেন্দ্র। তাঁর জ্ঞান হতে হবে বিজ্ঞানসম্মত এবং কর্ম হতে হবে মানবকল্যাণমুখী।”

আধুনিক বিজ্ঞানী, গবেষক, শিক্ষক ও রাষ্ট্রনায়কদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জ্ঞানকে স্বার্থসিদ্ধির বদলে মানবমুক্তি ও প্রকৃতির রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবহার করলেই একটি সুস্থ ও আলোকোজ্জ্বল সভ্যতা গড়ে তোলা সম্ভব।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন