
HindusNews–এর প্রতিবেদন প্রকাশের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া, নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন
নিজস্ব প্রতিবেদক | HindusNews
প্রকাশকাল: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত দেশের অন্যতম পবিত্র হিন্দু তীর্থস্থান চন্দ্রনাথধামের সন্নিকটে গরু জবাই ও বনভোজনের আয়োজনকে কেন্দ্র করে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। HindusNews-এ এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা, ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে HindusNews-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত শনিবার চন্দ্রনাথধাম মহাতীর্থের পাদদেশে তীর্থভূমির অধীন ২ নম্বর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় বনভোজনের আয়োজন করা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, এর উদ্যোক্তা ছিলেন উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা তাওহীদুল হক চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের এমপি প্রার্থী আনোয়ার ছিদ্দিকী, উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মিজানুর রহমান, সেক্রেটারি মো. আবু তাহেরসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের পাঁচ শতাধিক জামায়াত নেতাকর্মী। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় এক হাজার মানুষ অংশ নেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, অনুষ্ঠানস্থলে প্রকাশ্যে গরু জবাই করে খাবার পরিবেশন করা হয়। পাশাপাশি আজান দেওয়া, সম্মিলিত নামাজ আদায় এবং ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পবিত্র চন্দ্রনাথধামের একেবারে সন্নিকটে এসব কার্যক্রম হওয়ায় স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে গভীর ক্ষোভ ও মানসিক আঘাতের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় কয়েকশ’ হিন্দু ভোটারকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা সেখানে গিয়ে তীর্থভূমির পাশে গরু জবাই ও ধর্মীয় স্লোগান শুনে মানসিকভাবে আহত হন বলে HindusNews-কে জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলেন,
“বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে ভয় পাচ্ছি। কিন্তু চন্দ্রনাথধামের মতো পবিত্র স্থানের পাশে এমন আয়োজন আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে চরমভাবে আঘাত করেছে।”
HindusNews-এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রতিক্রিয়া
HindusNews-এ প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। দেশ-বিদেশের হিন্দু অধিকারকর্মী, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তীব্র নিন্দা জানান এবং ঘটনাটিকে “তীর্থভূমির মর্যাদা লঙ্ঘনের নজিরবিহীন ঘটনা” বলে আখ্যা দেন।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটিও আনুষ্ঠানিকভাবে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের স্কিম ও নির্দেশনা অনুযায়ী চন্দ্রনাথ ধাম, কাঞ্চননাথ ধাম ও আদিনাথ ধাম পরিচালিত হয় এবং চট্টগ্রামের জেলা জজ এই কমিটির তত্ত্বাবধায়ক।
স্রাইন কমিটির লিখিত বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়—
“স্রাইন কমিটির অনুমতি ব্যতীত তীর্থভূমির কোনো সম্পদ ব্যবহার করে পিকনিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্পূর্ণ বেআইনি। তীর্থের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়—এমন যেকোনো উদ্যোগের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য প্রশাসন, রাজনৈতিক দল এবং সব ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক সূত্র HindusNews-কে জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তারা অবগত হয়েছেন এবং লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনার পর সীতাকুণ্ড এলাকায় ধর্মীয় সহাবস্থান, সংখ্যালঘু নিরাপত্তা এবং পবিত্র তীর্থভূমির সুরক্ষা নিয়ে নতুন করে জনআলোচনা শুরু হয়েছে।