
স্বাধীনতার মাত্র দুদিন আগে যেভাবে ঘাতকদের শিকারে পরিণত হন ড. সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য
ঢাকা ডেস্ক: ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে তখন বাংলাদেশ। ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসর আল-বদর বাহিনী মেতে ওঠে এক জঘন্য হত্যাযজ্ঞে। বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার সেই নীল নকশার অন্যতম শিকার ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের যশস্বী শিক্ষক ও প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য।
বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে, ১৪ ডিসেম্বর সকালে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অধ্যাপকের বাসভবনে হানা দেয় সশস্ত্র আল-বদর সদস্যরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ঘাতকরা জোরপূর্বক বাড়িতে প্রবেশ করে জানতে চায়, "তিনিই কি সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য?"
পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর 'জরুরি আলোচনার' অজুহাতে তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা। অধ্যাপক ভট্টাচার্য তখনই বুঝতে পেরেছিলেন, এটি কোনো আলোচনা নয় বরং এক নিশ্চিত মৃত্যুফাঁদ। স্ত্রী ও সন্তানদের তীব্র আর্তনাদ এবং বাধা উপেক্ষা করে আল-বদর সদস্যরা তাঁকে জোরপূর্বক চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে টেনে নিয়ে যায়।
জানা যায়, ড. ভট্টাচার্যকে প্রথমে আল-বদরদের একটি গোপন আস্তানায় নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে আরও অনেক বুদ্ধিজীবীকে আটকে রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে তাঁকে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে অত্যন্ত নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।
স্বাধীনতার উষালগ্নে বাঙালি জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর মরদেহ আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যায়নি। দেশের জন্য আত্মত্যাগকারী এই মহান শিক্ষাবিদের স্মৃতি আজও ইতিহাসের পাতায় অম্লান হয়ে আছে।