
বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনস্রোত, শহীদদের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা
ঢাকা প্রতিনিধি :
মহান বিজয় দিবস উদ্যাপন ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে নেমেছে সর্বস্তরের মানুষের ঢল। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ—সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকা।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধে সমবেত হন। হাতে ফুল, মুখে দেশপ্রেমের আবেগ নিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তারা।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাধারণ জনগণের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপরই ফুল হাতে উচ্ছ্বসিত মানুষ স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে শুরু করেন।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিসৌধ এলাকায় মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। অনেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি বিজয়ের আনন্দে মেতে ওঠেন। শিশুদের উপস্থিতি ছিল বিশেষভাবে চোখে পড়ার মতো। অনেক শিশুর মুখে ও হাতে আঁকা ছিল জাতীয় পতাকা ও জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি।
শীত উপেক্ষা করে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারাও জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তাদের অনেকের কপালে লাল-সবুজ রঙে জাতীয় পতাকা আঁকা ছিল, হাতে উড়ছিল জাতীয় পতাকা। পোশাকেও ছিল বিজয়ের রঙের বাহারি ছোঁয়া। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে দেখা করে শ্রদ্ধা জানান সাধারণ মানুষ, অনেকে সালাম জানিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
এর আগে সকালে মহান বিজয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে স্বাধীনতার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান তারা।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায় এবং বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে রাষ্ট্রপতি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সেনা কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
এদিকে, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে একাধিক বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সর্বোচ্চসংখ্যক জাতীয় পতাকা নিয়ে প্যারাশুটিং প্রদর্শনের মাধ্যমে বিশ্বরেকর্ড গড়ার উদ্যোগ।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর পৃথক ফ্লাই-পাস্ট প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। একই স্থানে একটি বিশেষ বিজয় দিবস ব্যান্ড শোও আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার দেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে সকাল ১১টা ৪০ মিনিট থেকে পতাকাবাহী স্কাইডাইভ প্রদর্শন করবেন। এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ পতাকা-প্যারাশুটিং প্রদর্শনী হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
মহান বিজয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে এভাবেই শ্রদ্ধা, গৌরব ও আনন্দে মুখর হয়ে উঠেছে গোটা দেশ।