
সরস্বতী দেবীকে নিয়ে ‘অশালীন’ মন্তব্য: সাংবাদিক আনিস আলমগীরের পুরনো বিতর্ক ও সাম্প্রতিক আলোচনা
স্টাফ রিপোর্টার | ঢাকা
সদ্য আটক হওয়া সাংবাদিক আনিস আলমগীরের ২০১৮ সালের একটি ফেসবুক পোস্ট নতুন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় তুলেছে। সনাতন ধর্মের বিদ্যার দেবী সরস্বতীকে নিয়ে করা ওই মন্তব্যের জেরে এক সময় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। বর্তমানে তার আটকের পর নেটিজেনদের একটি বড় অংশ সেই পুরনো ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
যা ছিল সেই পোস্টে
২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি আনিস আলমগীর তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি দেবী সরস্বতীকে উদ্দেশ্য করে ‘সর্বকালের সেরা সে/ক্সি দেবী’ বলে মন্তব্য করেন।
তার সেই পোস্টে লেখা ছিল, “সরস্বতী একমাত্র দেবী আমি যার প্রেমে পড়েছিলাম। ক্লাস নাইনে পড়াকালে স্কুলের পূজায় আমি তাকে প্রথম দেখি। রূপে এতো মুগ্ধ ছিলাম তার, বিদ্যা চাইতে ভুলে গেছি। আজও বিদ্যা চাইতে পারলাম না এই সর্বকালের সেরা সে/ক্সি দেবীর কাছে। সামনে গেলে আমি বিদ্যা চাওয়ার কথা ভুলে যাই! সব ভুলে যাই, সে কারণে না পেলাম বিদ্যা, না পেলাম তার সঙ্গে মিল খুঁজতে খুঁজতে বাস্তবের কোনও সরস্বতীকে।”
মামলা ও তৎকালীন পরিস্থিতি
এই মন্তব্যের পরপরই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে আনিস আলমগীরের বিরুদ্ধে তৎকালীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের করেছিলেন সুশান্ত কুমার বসু নামের এক ব্যক্তি। অভিযোগ রয়েছে, মামলা হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন সরকার ও প্রশাসনের প্রভাবে সে সময় আনিস আলমগীরের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বা তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
দ্বিমুখী আচরণের অভিযোগ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচকরা অভিযোগ করছেন, বিগত সরকারের সময়ে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর একাধিকবার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভুয়া আইডি খোলা বা আইডি হ্যাক করে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে হিন্দুদের গ্রেপ্তার, ঘরবাড়ি ও উপাসনালয়ে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। অথচ আনিস আলমগীরের মতো প্রভাবশালী সাংবাদিক সুস্পষ্টভাবে অশালীন মন্তব্য করার পরও রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপট ও প্রতিক্রিয়া
সম্প্রতি আনিস আলমগীর আটক হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। তার অনুসারী ও কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখলেও, সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ বিশাল একটি গোষ্ঠী একে ‘প্রকৃতির বিচার’ হিসেবে অভিহিত করছেন। তাদের মতে, অতীতে ক্ষমতার দাপটে পার পেয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হয়েছে।