
যেকোনো মূল্যে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে: সিএমপি কমিশনার
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ—এমনটাই জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ। তিনি বলেন, ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে নির্বাচন শুরুর আগেই নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হবে এবং প্রয়োজনে সন্ত্রাস দমনে ‘চরম পন্থা’ অবলম্বন করতেও পুলিশ পিছপা হবে না।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের কর্ণফুলী হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সিএমপি কমিশনার। সভায় তিনি নগরীর অপরাধ পরিস্থিতি, আসন্ন নির্বাচন, সন্ত্রাসী তৎপরতা ও পুলিশের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য দেন।
হাসিব আজিজ বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাজ্জাদ বাহিনী, লালটু বাহিনী, পল্টু বাহিনীসহ বিভিন্ন নামে সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে, যারা ভাড়ায় খুনসহ নানা অপরাধে জড়িত। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “পুলিশ বাহিনী ছাড়া এই নগরে অন্য কোনো বাহিনী থাকতে পারবে না। এসব বাহিনী নির্মূল করতে হবে। নির্মূল মানে নির্মূল। প্রয়োজনে চরম পন্থা অবলম্বন করতেও আমি এক মুহূর্ত দ্বিধা করব না।”
আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে একটি পরিকল্পিত ‘ভীতি সঞ্চার’ করার চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিতাড়িত ফ্যাসিস্ট শক্তি ভোটের দিন ভোটার উপস্থিতি কমিয়ে দিতে চায়। কিন্তু পুলিশ তা হতে দেবে না। জনগণ যেন উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারে, সে লক্ষ্যে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিতাড়িত স্বৈরাচার ও তাদের বিদেশি প্রভুরা বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করছে। এই নির্বাচন তাদের জন্য একটি ‘লিটমাস টেস্ট’। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমনভাবে কাজ করবে, যাতে তারা এই পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়।
পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার জানান, ইতোমধ্যে লুণ্ঠিত অস্ত্রের প্রায় ৮০ শতাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ২০ শতাংশ অস্ত্র পাহাড়ি এলাকার কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর হাতে চলে গেছে বলে তথ্য রয়েছে। তবে নির্বাচনের আগেই এসব অস্ত্র উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র সম্পর্কে তিনি বলেন, সংখ্যালঘু ভোটার অধ্যুষিত এলাকা ও অপরাধপ্রবণ অঞ্চলগুলোর কেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে পুলিশের সব টিম মাঠে কাজ করছে, কাউকে ব্যারাকে বসিয়ে রাখা হয়নি।
সাংবাদিক ও পুলিশের সম্পর্ক প্রসঙ্গে হাসিব আজিজ বলেন, ব্যক্তিগতভাবে বন্ধুত্ব থাকতে পারে, তবে পেশাগত ক্ষেত্রে একটি ‘দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক’ থাকাই রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক। তিনি বিগত সরকারের সমালোচনা করে বলেন, গত ১৭ বছরে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ ও সাংবাদিকরা এক অ্যালাইনমেন্টে চলে যাওয়ায় দেশে একটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল, যা রাষ্ট্রের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে এনেছে।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ইউ মাস্ট বি ফার্ম ইন ইউর অ্যাটিটিউড, বাট ভেরি পোলাইট ইন ইউর বিহেভিয়ার।” অর্থাৎ আচরণে দৃঢ় কিন্তু ব্যবহারে ভদ্র হতে হবে। একজন সাংবাদিক বা সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে কোনো ধরনের দুর্ব্যবহার করা যাবে না। জনগণের মধ্যে নিরাপত্তার অনুভূতি তৈরি করাই একজন পুলিশ কর্মকর্তার প্রকৃত সাফল্য।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।