
মিথ্যা ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ভালুকায় হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যা ও জীবন্ত পুড়িয়ে মারার অভিযোগ!
HindusNews ডেস্ক :
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা ও বিচারহীনতার আরেকটি ভয়াবহ দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায়। ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির মিথ্যা অভিযোগ তুলে দিপু চন্দ্র দাশ (৩০) নামে এক হিন্দু যুবককে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তাঁর নিথর দেহে আগুন দেওয়ার মতো নির্মম ঘটনা ঘটে, যা মানবতা ও সভ্যতাকে চরমভাবে লঙ্ঘন করেছে।
ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টারবাড়ী এলাকার ডুবালিয়াপাড়া সংলগ্ন পাইওনিয়ার নিট কম্পোজিট কারখানায়। নিহত দিপু চন্দ্র দাশ ওই কারখানার একজন শ্রমিক ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার বাসিন্দা এবং তাঁর পিতা রবি চন্দ্র দাশ।
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস উপলক্ষে কারখানার ভেতরে একপর্যায়ে দিপুর বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগ ছড়ানো হয়। মুহূর্তের মধ্যেই এই গুজব কারখানা ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা দিপুকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর পরও ক্ষোভ থামেনি। উত্তেজিত জনতা দিপুর মরদেহ স্কয়ার মাস্টারবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিয়ে গিয়ে একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে। স্লোগান দিতে দিতে মরদেহে আঘাত করা হয় এবং একপর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে মরদেহটি ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে নিয়ে গিয়ে পুনরায় আগুন দেওয়া হলে মহাসড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে চরম আতঙ্ক।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে এবং বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফিরোজ হোসেন জানান, নিহত ব্যক্তির মরদেহ পুলিশের হেফাজতে রয়েছে এবং পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক।
তবে HindusNews-এর হাতে আসা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও প্রত্যক্ষ বর্ণনা এই ঘটনার ভিন্ন চিত্র তুলে ধরছে। কারখানায় কর্মরত এক মুসলিম নারী শ্রমিক নিজ মুখে জানিয়েছেন, দিপু চন্দ্র দাশ প্রকৃতপক্ষে কোনো ধর্ম বা নবী সম্পর্কে কোনো কটূক্তি করেননি। তিনি নিজ যোগ্যতায় গার্মেন্টসে সুপারভাইজার পদে উন্নীত হয়েছিলেন। কিন্তু একই কারখানার আরও তিনজন মুসলিম কর্মী অর্থ লেনদেন করেও সেই পদ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, সেই বিরোধের জের ধরেই পরিকল্পিতভাবে দিপুর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা গুজব ছড়ানো হয়।
ওই নারী শ্রমিকের ভাষ্যমতে, দিপুকে ডেকে নিয়ে ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ চিৎকার করে বলা হয়—তিনি ইসলাম ও নবীজিকে অবমাননা করেছেন। উপস্থিত উত্তেজিত জনতা সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই তাঁকে নির্মমভাবে মারধর করে, গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে এবং উল্লাস প্রকাশ করে।