
ক্ষোভের আগুনে ছায়ানট: সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর মধ্যরাতের বর্বর হামলা
ঢাকা প্রতিনিধি :
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবরে সৃষ্ট ক্ষোভ–বিক্ষোভের মধ্যে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ভবনে হামলা, ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর একদল বিক্ষোভকারী সাততলা ভবনের বিভিন্ন তলায় ঢুকে নির্বিচারে ভাঙচুর চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের লাইভ ফুটেজে দেখা যায়, মুখে কাপড় বেঁধে ও হেলমেট পরা হামলাকারীরা ভবনের প্রতিটি কক্ষে প্রবেশ করে আসবাবপত্র, বাদ্যযন্ত্র, মনিটরিং সিস্টেম, লাইট, ফ্যান ও জানালা ভেঙে ফেলে। নিচতলায় থাকা সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়। মাটির তৈরি চারুকর্ম ও শিল্পকর্মও ভাঙচুরের হাত থেকে রেহাই পায়নি।
হামলার সময় ভবনের বিভিন্ন কক্ষে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিন্নভিন্ন করে ফেলা হয়। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষেও ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়। নামফলক ভাঙার পাশাপাশি মিলনায়তনে যা পাওয়া গেছে, সবই ভেঙে চুরমার করা হয়েছে। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে হামলাকারীদের ‘ভারতীয় সংস্কৃতি চর্চার’ বিরুদ্ধে স্লোগান দিতেও শোনা যায়।
ভাঙচুর শেষে হামলাকারীরা ভবনের সামনে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে ফায়ার সার্ভিস পৌঁছানোর আগেই আগুন নিভে যাওয়ায় বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা পায় প্রতিষ্ঠানটি। ধানমন্ডি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, ৩২ নম্বরে হামলার ঘটনার পরপরই ছায়ানটে এই হামলা হয় এবং পুলিশের ধারণা—উভয় ঘটনায় একই অংশগ্রহণকারীরা জড়িত।
খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর ছায়ানট কর্তৃপক্ষ ‘ছায়ানট সঙ্গীতবিদ্যায়তন’-এর ক্লাসসহ সংগঠনের সব কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়, যা রাত সাড়ে তিনটার দিকে সংগঠনটির ফেসবুক পেজে জানানো হয়।
১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত ছায়ানট বাঙালির সাংস্কৃতিক জাগরণের অন্যতম অগ্রদূত। পাকিস্তান আমলের দমননীতি উপেক্ষা করে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদযাপনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করা সংগঠনটি এর আগেও সহিংসতার শিকার হয়েছে। ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ভয়াবহ বোমা হামলায় প্রাণ হারান ১০ জন। এরপরও সাংস্কৃতিক আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ায়নি ছায়ানট।
সর্বশেষ এই হামলার পর সংগঠনটির সদস্য, শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন—ভাঙচুর ও ভয় দেখিয়ে বাঙালির সংস্কৃতিচর্চা থামানো যাবে না; ছায়ানট আবারও ঘুরে দাঁড়াবে