
ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু দাসকে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা ও অন্ধ্রপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পবন কল্যাণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চলমান ধারাবাহিক নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং ময়মনসিংহে তরুণ দীপু চন্দ্র দাসের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে গর্জে উঠেছেন ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা জনপ্রিয় অভিনেতা পবন কল্যাণ।
নিজের এক ফেসবুক পোস্টে তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস স্মরণ করে বলেন যে, বাংলাদেশ এক সময় ভারতীয় বীর সেনাদের রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছিল। প্রায় ৩,৯০০ ভারতীয় সেনা জীবন দিয়েছিলেন এবং ১০,০০০-এর বেশি আহত হয়েছিলেন যাতে সেই দেশের মানুষ মর্যাদা ও শান্তির সাথে বাঁচতে পারে। কিন্তু বর্তমানে সেই মাটিতেই সংখ্যালঘুদের রক্ত ঝরছে এবং শান্তি আজ কেবল একটি শব্দে পরিণত হয়েছে।
পবন কল্যাণ ময়মনসিংহের মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন যে, দীপু চন্দ্র দাসকে যেভাবে জনসম্মুখে পিটিয়ে হত্যা করে তার মৃতদেহ গাছে ঝুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তা একবিংশ শতাব্দীর মানবতাকে চরমভাবে লজ্জিত করে। এটি কেবল কোনো বিচ্ছিন্ন বিশৃঙ্খলা নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত এবং টার্গেটেড হামলা যা কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ও বিশ্বাসের মূলে আঘাত করে।
তিনি উল্লেখ করেন যে, গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা চরমে পৌঁছেছে, যার মধ্যে ইসকন সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের কারাবরণ এবং প্রদীপ ভৌমিকের লিঞ্চিংয়ের মতো ঘটনা বিশ্ববিবেকের কাছে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি জানান যে, ১৯৫১ সালে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা যেখানে ২২ শতাংশ ছিল, আজ তা কমে ৮ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এই জনতাত্ত্বিক পরিবর্তন কেবল অভিবাসন নয়, বরং পদ্ধতিগত নিপীড়নের একটি ফলাফল। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তথ্য অনুযায়ী সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক হাজার সহিংসতার ঘটনা এবং দেড় শতাধিক মন্দির ভাঙচুরের বিষয়টিও তিনি উদ্বেগের সাথে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ১৯৭১-এর শহীদদের রক্ত শান্তির জন্য ঝরানো হয়েছিল, নিপীড়নের জন্য নয়।
সবশেষে পবন কল্যাণ বাংলাদেশ সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং স্পষ্টভাবে বলেন যে, অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে যাতে কোনো উন্মত্ত জনতা নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে না করে।
একইসাথে তিনি জাতিসংঘ এবং বিশ্বনেতৃবৃন্দের 'নির্বাচিত নীরবতা'র সমালোচনা করে বলেন যে, মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক মহলের এখনই চোখ খোলা উচিত। তিনি দীপু দাসের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এই অবিচারের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে সরব হওয়ার ডাক দিয়েছেন।