
রাউজানে ধারাবাহিক অগ্নিসংযোগ: হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে টার্গেট করে বসতবাড়ীতে আগুন দেয়ার চেষ্টা!
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় ধারাবাহিকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরকে টার্গেট করে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতকারী চক্র পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাউজান উপজেলার ৭নং রাউজান ইউনিয়নের কেউটিয়া কুলালপাড়া এলাকায় প্রথম বড় ধরনের হামলার ঘটনা ঘটে। দুষ্কৃতকারীরা প্রথমে তিনটি হিন্দু পরিবারের বাড়িতে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে। তবে স্থানীয়দের তাৎক্ষণিক তৎপরতায় সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে তারা পাশ্ববর্তী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সাধন বড়ুয়ার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়।
ঘটনার পরপরই বাংলাদেশ পুলিশ প্রশাসন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সরেজমিন তদন্ত শুরু করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও স্থানীয় জনগণকে আইনি সহায়তা ও নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) জুনায়েদ কাউসার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিভি) মো. রাসেল, রাঙ্গুনিয়ার সার্কেল এএসপি বেলায়েত হোসাইন এবং রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম (পলাশ)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান টিপু ভাই, রাউজান উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুমন দাশ গুপ্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক বাপ্পা কুমার দাশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসী।
এর রেশ কাটতে না কাটতেই গতকাল আবারও রাউজানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এবার লক্ষ্যবস্তু করা হয় রাউজান পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের তেজেন্দ্র শীলের বাড়ি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভোর আনুমানিক ৩টার দিকে দুষ্কৃতকারীরা তেজেন্দ্র শীলের তিনটি বসতঘরের দরজায় বাইরে থেকে হুক লাগিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভোর ৪টা ২১ মিনিটে আগুন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। দ্রুত স্থানীয়রা ছুটে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
একই এলাকায় অল্প সময়ের ব্যবধানে বারবার হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলার ঘটনায় স্থানীয় সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি গোষ্ঠী রাউজানে সাম্প্রদায়িক শান্তি বিনষ্ট করতে চাইছে।
পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে তদন্ত জোরদার করা হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।