
যশোরের মণিরামপুরে হিন্দু কৃষক দম্পতিকে রক্তাক্ত করে দুর্ধর্ষ ডাকাতি!
মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় এক হিন্দু কৃষক পরিবারকে টার্গেট করে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতদের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন কৃষক নির্মল দাস ও তাঁর স্ত্রী সুষমা রানী দাস। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) ভোর রাত সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলার জলকর রোহিতা দাসপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে করে আসা ৭-৮ জন মুখোশধারী ডাকাত ঘরের কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। এ সময় তারা নির্মল দাসকে মারধর করে মাথায় রড দিয়ে আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাঁর স্ত্রী সুষমা রানী দাসকেও মারধর করা হয়।
ডাকাতরা ঘরের আলমারি ভেঙে প্রায় ৫–৭ ভরি স্বর্ণালংকার ও ধান বিক্রির নগদ প্রায় ৪০ হাজার টাকা লুট করে নেয়। চিৎকার করতে চাইলে পরিবারের দুই শিশুকে হত্যার হুমকি দিয়ে সবাইকে ভয়ভীতি দেখানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
আহত নির্মল দাস বলেন,
“আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওরা ঘরে ঢুকে পড়ে। আমাকে মারতে মারতে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যদের মারধর করে সবকিছু নিয়ে যায়।”
সুষমা রানী দাস জানান,
“আমি জানালা খুলে চিৎকার দিতে চাইলে ওরা মুখ চেপে ধরে মারধর করে এবং অস্ত্র দেখিয়ে খুনের হুমকি দেয়।”
নির্মল দাসের ভাইপো, স্কুলশিক্ষক দেবাশীষ বিশ্বাস জানান, সম্প্রতি তাঁর কাকা প্রায় ১৫০ মণ ধান বিক্রি করেছিলেন। সেই টাকা থেকেই ডাকাতরা নগদ অর্থ লুট করে নেয়। ডাকাতরা বাড়ির অদূরে পাকা রাস্তার পাশে গাড়ি রেখে পরিকল্পিতভাবেই এই ডাকাতি চালায় বলে তিনি দাবি করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল ওয়াদুদ জানান, চিৎকার শুনে তিনি রাস্তায় বের হয়ে একটি প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল যেতে দেখেন, তবে তখন পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে না পারায় তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
খবর পেয়ে মণিরামপুর থানার পুলিশ ও খেদাপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের কাজ চলছে।
মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রজিউল্লাহ খান বলেন,
“আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা সুস্থ হয়ে থানায় এলে মামলা গ্রহণ করা হবে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”
এই ঘটনায় এলাকায় সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারগুলোর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন।